ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব স্টাফ ও কারাবন্দীকে আনা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার আওতায়

নিরাপত্তা জোরদারে স্ক্যানার জ্যামার কিনছে কারা অধিদফতর

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

নিরাপত্তা জোরদারে স্ক্যানার জ্যামার কিনছে কারা অধিদফতর

মশিউর রহমান খান ॥ কারাভ্যন্তরে যে কোন প্রকার মাদক, মোবাইল ও অবৈধ পণ্য নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জ্যামার ও আধুনিক ওয়াকিটকি কিনছে কারা অধিদফতর। কারা নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে একই সঙ্গে দেশের প্রতিটি কারাগারের ভেতরে ও বাইরের সীমানাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আওতায় আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের সংস্থাটি। এর ফলে কারাগারের দায়িত্ব পালনরত স্টাফসহ সকল কারাবন্দীকে এই ক্যামেরার আওতায় রাখা হবে। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে অতি দ্রুত এসব যন্ত্রপাতি কেনা হবে বলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। এসব প্রযুক্তির পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে বন্দীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা রক্ষায় কারা বিভাগ এক নতুন যুগে পদার্পণ করবে। কারা সূত্র জানায়, দেশের সকল কারাগার নিñিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনতে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ৩২ কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এতে সফলতা দেখা দিলে পরবর্তীতে দেশের বাকি ৩৬ কারাগারেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন নামে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ মেয়াদে চলমান এ প্রকল্পের ব্যয় বহন করছে সরকার। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সিলেট বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের প্রতিটি কারাগারের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। এরই প্রাথমিক অংশ হিসেবে আমরা ২ বডি স্ক্যানার, ৬ লাগেজ স্ক্যানার, ছোট ৩শ’ ৭০ জ্যামার, বড় জ্যামার ৬ ও কারাভ্যন্তরে ও বাইরেসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৪শ’ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক ওয়াকিটকি ক্রয় করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ৩২ কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিñিদ্র্র করতে প্রায় ১ হাজারের বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এছাড়াও ট্যানওয়ে সিস্টেম হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে ডিটেক্টর কেনা হবে। কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে কারাগারে আটক সাড়ে ৭৫ হাজার বন্দীর নিরাপত্তায় কোন প্রকার বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার বা আর্চওয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে কোন বন্দী কারাভ্যন্তরে কি কি জিনিস সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করছে বা কোন প্রকার মোবাইল বা ধাতব কিংবা মাদকসহ দাহ্য পদার্থ নিয়ে প্রবেশ করছে তা বোঝার জন্য কোন যন্ত্র না থাকায় হাতে সমস্ত শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই বন্দীদের কারাভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এতে অনায়াসে কারাবন্দীরা অবৈধ পণ্য ও দ্রব্য নিয়ে প্রবেশ করছে। কারাভ্যন্তরে মোবাইল ফোনের ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব স্ক্যানার সিস্টেম চালু হলে কোন বন্দী আসামিই কারাভ্যন্তরে কোন প্রকার মোবাইল ফোন ট্যাব বা ধাতব পণ্য নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২ টি বডি স্ক্যানার বৃহৎ কারাগার হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ৬ লাগেজ স্ক্যানার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ, কাশিপুরের ৩ কেন্দ্রীয় কারাগার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীর জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। এর বাইরে যেসব কারাগারে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বন্দীদের রাখা হবে সেসব কারাগারেই এসব বডি স্ক্যানার ও লাগেজ স্ক্যানার ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রকল্পের প্রতিটি কারাগারেই আর্চওয়ে ডিটেক্টর ব্যবহার করা হবে। বাইরে থেকে কোন গাড়ি বা যানবাহন আসতে তা সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষার পরই ঝুঁকিমুক্ত প্রমাণের পরই কেবল সেই বাহনকে কারাভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে। অন্যথায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে। কারা সূত্র জানায়, আদালত থেকে আসা সকল নতুন-পুরাতন আসামিকেই এসব বডি স্ক্যানার পেরিয়ে কারাফটকে প্রবেশ করতে হবে। বিমানবন্দরের ন্যায় সকল বন্দীর দেহই স্ক্যানারের মাধ্যমে কোন প্রকার অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হবে। মূল ফটকেই এসব বডি স্ক্যানার বসানো হবে। এছাড়া কারাবন্দীর সঙ্গে আনা সকল কাপড়, পরিধেয় বস্ত্রও পরীক্ষা করে দেখার জন্য লাগেজ স্ক্যানার ব্যবহৃত হবে। বন্দী পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক নিমিষেই মোবাইল ফোন, ধাতব বস্তু, মাদক, অবৈধ পণ্যসহ সকল নিষিদ্ধ বস্তুর পরীক্ষা শেষেই কেবল একজন বন্দীকে কারাভ্যন্তরে পাঠানো হবে। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য কারা বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিটি কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপারেটিংয়ের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এর ফলে কারাগারেও বিমান বন্দরের মতো সকল ব্যক্তি বা পণ্যই পরীক্ষাপূর্বক প্রবেশ করবে। এছাড়া যেসব কারাগারে এসব যন্ত্র বসানো হবে সেসব কারাগারে অবৈধভাবে মোবাইল ফোন প্রবেশের কোন সুযোগ থাকছে না। এর পরও কোন বন্দী অবৈধভাবে কারাভ্যন্তরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারেন সেজন্য আধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন জ্যামার বসানো হবে। এতে মোবাইল ফোনে কথা বলা সম্ভব হবে না। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দায়িত্বরত কোন কারারক্ষী বা কোন কারা কর্মকর্তাসহ সকল বন্দীকে সর্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় আনা সম্ভব হবে। প্রতিদিনের কর্মকা- মনিটরিংয়ের জন্য সকল তথ্য রেকর্ড করা হবে। জানা গেছে, এই প্রথমবারের মতো কারা অধিদফতর কারাভ্যন্তরে ও কারা সীমানায় ঘটে যাওয়া কোন দুর্ঘটনা জানাতে বা কোন প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াকিটকি ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছে কারা প্রশাসন। কারা বিদ্রোহ, সার্বিক নিরাপত্তা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে মুহূর্তেই দায়িত্বরত একে অপরের মাঝে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হবে। তবে এসব ওয়াকিটকি জেলার, সুপার, সর্বপ্রধান কারারক্ষী বা সুবেদার কোন কোন ক্ষেত্রে কারারক্ষীরাও এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া ওয়াচ টাওয়ার ও সীমানা পাহারায় এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, মূলত কারা কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজই হচ্ছে বন্দীর নিরাপত্তা প্রদান করা। বন্দীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা রক্ষায়ও কোন প্রকার অবৈধ বস্তু যাতে কারাভ্যন্তরে বন্দী তার সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আধুনিক ওয়াকটিকি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করার জন্য কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন নামে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে সরকার এটি বাস্তবায়ন করছে। প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ মেয়াদে চলমান এ প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ৩২ কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করবে। আমরা ইতোমধ্যেই এসব যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
×