ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্য হাতে ফেরা!

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

শূন্য হাতে ফেরা!

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদ্যসমাপ্ত নিউজিল্যান্ড সফরটি এককথায় বলা যায় ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। ওয়ানডে সিরিজে ৩-০, টি-২০ সিরিজে ৩-০ এবং ২টি টেস্টে ২-০ ব্যবধানে পরাজয়ের গ্লানিকে আর কিভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? হোয়াইটওয়াশ বা ধবলধোলাই অভিধাও বোধকরি এর জন্য যথেষ্ট নয়। বরং মোটা দাগে বলা যায়, জাতীয় ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ড সফর শেষ করে ফিরেছে শূন্য হাতে। ফলে লাখো কোটি ভক্ত ও ক্রীড়ানুরাগীর মতো আমরাও হতাশ। অথচ আশা ছিল টেস্টে না হোক, বাংলাদেশ দল অন্তত ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতে কিছুটা হলেও সাফল্য পাবে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে গত দুই বছরের অর্জনই জ্বালিয়ে রেখেছিল সে আশার আলো। নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেট বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে, এমন আশঙ্কা ছিল। সাত বছর পর নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলতে যাওয়াটা বিশেষ করে টেস্টে টাইগারদের জন্য ছিল অগ্নিপরীক্ষা। আর তাই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিন্তাভাবনা করেই করা হয়েছিল জাতীয় দলটি। দল নির্বাচনে ঘটানো হয়েছিল প্রবীণ খেলোয়াড়দের পাশাপাশি নবীনের সমন্বয়। পুরো সিরিজটির জন্য সাজানো হয়েছিল ব্যয়বহুল কোচিং প্যানেল। প্রধান কোচের পরামর্শে নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হয়েছে অনুশীলন ক্যাম্প। সেখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুদৃশ্য স্পটে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের হাস্যোজ্জ্বল ছবিও পোস্ট করা হয়েছে গণমাধ্যমে। প্রাপ্তি কি, সেটা বিসিবি এবং কোচই ভাল বলতে পারবে শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদানের মাধ্যমে। ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি, টেস্ট- কোনটাতেই ধারাবাহিকতা ছিল না বাংলাদেশ দলটির। তবে সবার ওপরে প্রকট হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত ও এলোমেলো ব্যাটিং। অথচ প্রায় সর্বত্রই ছিল ব্যাটিংবান্ধব উইকেট। এমনকি বৃষ্টি ও বাতাসের আনুকূল্যও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। ব্যক্তিগত সাফল্যের দিক থেকে অন্তত দুজন সাকিব ও মুসফিক একটি টেস্টে কিছুটা সাফল্য দেখালেও সার্বিকভাবে উচ্চকিত ব্যাটিং-ব্যর্থতাই। দল যদি আদৌ না জেতে তাহলে সেই ব্যক্তিক সাফল্যও ম্লান হয়ে যায়। ব্যর্থতার পাল্লা ভারি হয়ে ওঠে ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও। পুরো সিরিজে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা প্রায় নিশ্চিত ক্যাচ ছেড়েছে কমপক্ষে ২০টি, যা এক কথায় চরম হতাশাজনক। অনেক ক্যাচ হাত ফসকে গেছে ফিল্ডারদের, অনেক ক্ষেত্রে বলের ফ্লাইট বোঝার সমস্যা, আবার অনেক ক্ষেত্রে বলের নিচেই যেতে পারেনি ফিল্ডার। অথচ বিদেশী একজন দামী ফিল্ডিং কোচ আনা হয়েছিল দলের জন্য। তৃতীয় প্রতিপক্ষ ছিল চোট বা ইনজুরি, যা প্রায় আগাগোড়া ভুগিয়েছে গোটা দলকে। ইনজুরি সূত্রে দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়কত্ব প্রাপ্ত তামিম ‘পুরো দায়’ স্বীকার করে নিয়ে অকপটে বলেছেন, ‘সহজ পথে হাঁটতে চেয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করতে চাইনি।’ গোটা সিরিজে কিছুটা সাফল্য ছিল বাংলাদেশী বোলারদের, তবে সেটাও অংশত। কেননা, সেখানেও সমস্যা ছিল আঘাতের। আরও যা দুঃখজনক, তা হলো, দলের সিনিয়ররা ভাল কোন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেননি, যা দেখে তরুণ খেলোয়াড়রা হবে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত। তারপরও বলতেই হয়, তরুণ ও নবাগতরা অপেক্ষাকৃত ভাল করেছে। ঘরে ফিরে দলটি নিশ্চয়ই ভিডিও ফুটেজ দেখে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসবে। আলোচনা-সমালোচনা, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, অনুশীলন ইত্যাদি। কেননা, সামনেই ভারত সফর। বাঘ-সিংহের লড়াই। খুব বেশি প্রত্যাশা নয়, লড়াইটা যেন অন্তত দেখার মতো হয়। আর এর জন্য কঠোর অনুশীলন ও পরিশ্রমের বিকল্প নেই।
×