ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ১২ দফা দাবিতে ডাকা পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার পণ্যবাহী পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও সরকারের মধ্যে পৌনে চার ঘণ্টা বৈঠকের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (২১ জেলা) পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল গাফফার বিশ্বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা ১২ দফা দাবি পেশ করেছিলাম। সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছে, তারা এগুলো সামনে বাস্তবায়ন করবেন। আমাদের কর্মসূচী (ধর্মঘট) প্রত্যাহার ঘোষণা করছি। ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের সাইড এ্যাঙ্গেল, বাম্পার ও হুড খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হচ্ছে মূল দাবি। এ ছাড়া অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই না করতে আদেশ জারি, সড়ক ও ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ, পুলিশের হয়রানি দূর করাসহ ১২ দফা দাবিতে সোমবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ এবং অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ ১২টি দাবিতে সোমবার ভোর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ধর্মঘট শুরু করে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। এরপর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা বিভাগ, বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। সমস্যা সমাধানে ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সভায় পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা ছাড়াও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা উপস্থিত ছিলেন। সমাধানে পৌঁছতে না পারায় দুপুর সোয়া ২টার দিকে অন্য একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সভা পরিচালনার দায়িত্ব পান নৌপরিবহন মন্ত্রী। বেলা সোয়া ৪টায় বৈঠক শেষে শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, ১২ দফা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ট্রাকের সামনে অতিরিক্ত বাম্পার খুলে ফেলার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন, বাম্পার খোলার সিদ্ধান্ত আগেই ছিল। বডির সঙ্গে যে অরিজিনাল বাম্পার সেটা থাকবে। তিনি আরও বলেন, হুক খোলার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত যে চোখা হুক হবে না। বিভিন্ন দেশে যে পদ্ধতিতে হুক আছে, সেভাবে হুকের মাথা ভোঁতা ধরনের হবে। এ্যাঙ্গেলও খোলা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একটা বডির জন্য অনেক টাকা লাগে, তেরি করতে সময় লাগে। বডির জন্য এ্যাঙ্গেল করা হয়, সেজন্য বডির মডেলটাকে বিআরটিএ একটা স্পেসিফিকেশন করে দেবে। সেই অনুযায়ী তারা বডি তৈরি করবে। এজন্য তাদের একটু সময়ও আমরা দিয়েছি। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের ব্লু-বুকে উল্লেখ করা পরিমাণে মাল পরিবহনের দাবি বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, ব্লু-বুকে উল্লেখ করা পরিমাণে মাল বহন করতে হবে। ওভারলোড বন্ধ করা হয়েছে। ওভারলোড বন্ধের জন্য যে এক্সেল (ওজন মাপার যন্ত্র) আছে সেখানে অনিয়ম হয় কিনা তা পরিদর্শনের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়ে তারা ৭ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে। তারপর ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ ও ওভারলোড কীভাবে বন্ধ করব সেটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। মন্ত্রী আরও বলেন, হাইওয়ের পাশে ট্রাক টার্মিনাল করা হবে। ইতোমধ্যে চারটি জেলায় টার্মিনাল করার জন্য শুরু হয়েছে। ফিটনেস নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে। বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সমস্যা, ট্যাক্স টোকেন দেয়াসহ অন্যান্য যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করবেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অন্যান্য যে সমস্যাগুলো রয়েছে নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধান করবেন। শাজাহান খান বলেন, মহাসড়কে পৌর টোলের নামে আমরা দেখেছি অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। যারা অবৈধভাবে সড়ক-মহাসড়ক থেকে টাকা নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বলেন, ট্রাক ও কর্ভাডভ্যানের ফিটনেস থেকে শুরু করে ড্রাইভিং লাইন্সেসসহ অন্যান্য কার্যাদি দ্রুত সম্পন্ন করতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। টোলের নামে মহাসড়কে টার্মিনালের বাইরে যারা টাকা নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছু দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত, আমি যেটা বলে আসছি, কোন ক্রমেই ওভারলোডের (অতিরিক্ত ওজনের) ট্রাক রাস্তা দিয়ে যেতে দেয়া হবে না। সড়কে পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজির প্রশ্নে বিভিন্ন সময়ে অনেক কথাই হয়। আমরা বাস্তবতায় অনেক ক্ষেত্রে দেখি এগুলোর হেড এ্যান্ড টেল (আগামাথা) খুঁজে পাই না। আমরা বলেছি, চাঁজাবাজি যেখান থেকে হয়, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের বলতে হবে। আমরা সেটা দেখব, আমরা নিশ্চিয়ই সেটা বন্ধ করব। ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানসহ পণ্য পরিবহন করা বিভিন্ন যান থেকে চাঁদা তোলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
×