ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ৪ বছরে ৫০১ কোটি টাকার চোরাচালানের স্বর্ণ আটক ॥ কাল আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস

কাস্টমস রাজস্ব আহরণে ২০ চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

কাস্টমস রাজস্ব আহরণে ২০ চ্যালেঞ্জ

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ২০১৩ থেকে গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছরে ৫০১ কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ৬৬৫ কেজিরও বেশি স্বর্ণ আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার এক কূটনৈতিকের কাছ থেকে ২৭ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে। এছাড়া আধুনিক পন্থায় কাস্টমস হাউস ও স্থলবন্দরগুলোতে প্রতি বছর গড়ে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বেড়েছে আঠার গুণহারে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে যেখানে কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা ৫২ কোটি টাকা ছিল, ওই সময়ে আদায় হয়েছে ৫৪ কোটি টাকারও বেশি। আর সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সে হিসাবে গেল চুয়াল্লিশ বছরে কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বেড়েছে ৮৩৫ গুণ বেশি। এ প্রক্রিয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আহরণকৃত রাজস্বে কাস্টমসের অবদান ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়টিকে দেশের উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব সরবরাহ করছে বলে উল্লেখ করে জনকল্যাণে এ রাজস্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে দাবি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এসবের পরও রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে রাজস্ব বোর্ড বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ২০ ধরনের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে পণ্যের বর্ণনা ও পরিমাণে অসত্য তথ্য, এসেস কোডের অপঘোষণা, গুণগত মান সম্পর্কে ভুল তথ্য, অবমূল্যায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি ও মানি লন্ডারিং। জাল দলিল দাখিলের মাধ্যমে অবৈধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম রাজস্ব ফাঁকি। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব ও কপিরাইট লঙ্ঘন/কাউন্টারফেইট পণ্যের আমদানি। কাস্টমসের অপর্যাপ্ত ডিজিটালাইজেশন। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, কন্টেনার স্ক্যানারের সঙ্গে এ্যাসাইকুড়ার কার্যকর সংযোগ না থাকা, ওয়েব্রিজের ওজনের তথ্যের সঙ্গে এ্যাসাইকুড়ার তথ্যের সমন্বয়ের অভাব। কন্টেনার ট্যাকিং সিস্টেম, আধুনিক ল্যাবরেটরির অভাব। কার্যকর আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগ সমন্বয় এবং সহযোগিতার অভাব। অপর্যাপ্ত অংশীদারিত্ব, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা। কাস্টম হাউসসমূহে অভিন্ন প্রাকটিসের অভাব। পণ্য চালান শুল্কায়নসহ খালাসে বিলম্ব। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার এবং রাজস্ব ফাঁকি। চোরাচালান ও অঘোষিত অর্থনীতি। যথাযথ/অপর্যাপ্ত মানসম্পন্ন মানব সম্পদের অভাব। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতার অভাব। যাত্রীর অগ্রিম তথ্য চালু না হওয়া এবং অত্যাবশ্যক বন্দর, বিএসটিআই, কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি বিভাগের অটোমেশন কাস্টম সিস্টেমের সঙ্গে প্রযুক্তির অভাব। সূত্র জানায়, এসব চ্যালেঞ্জের উত্তোরণে ডিজিটালাইজেশনসহ যেসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে তন্মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহায়ক, রাজস্ববান্ধব এবং আন্তর্জাতিক উত্তমচর্চা ও এতদসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশনের ভিত্তিতে বাংলা ভাষায় নতুন একটি কাস্টমস আইন প্রণীত হয়েছে। কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। ’৯০ দশকের শুরুতে এ্যাসাইকুড়া সিস্টেম প্রচলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কাস্টমসের ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শুভ সূচনা ঘটে। বাংলাদেশ কাস্টমসের অটোমেশনের অংশ হিসেবে ওয়েবসাইটের বেটা ভার্সন চালু হয়েছ। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমদানি-রফতানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পণ্য খালাসে গতিশীলতা আনয়নে এ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে আধুনিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের পাশাপাশি খালাসত্তোর নিরীক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। শুল্ক মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা আধুনিক করার লক্ষ্যে শুল্ক মূল্যের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যসমূহের মূল্যসহ সঠিক ঘোষণা প্রদানে এ্যাসাইকুড়া সিস্টেম কার্যক্রম চালু রয়েছে। আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস বিষয়ক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ কাস্টমস ন্যাশনাল ইনকোয়ারি পয়েন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া গবেষণা ও উন্নয়নে উৎসাহ প্রদান এবং নকল ও ভেজাল পণ্যের আমদানি রোধকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব ইতোমধ্যে পণ্যের শ্রেণী বিন্যাসের অগ্রিম রুলিং পদ্ধতি চালু করেছে। আমদানি-রফতানি পণ্য ঘোষণা যাচাই ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে চার বৃহৎ বন্দরে কন্টেনার স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনসহ দেশীয় অর্থের অবাধ প্রবাহ বন্ধে নেয়া হয়েছে জরুরী পদক্ষেপ। বাংলাদেশে কাস্টমসের এ সকল চ্যালেঞ্জ ও চালুকৃত সুবিধাসমূহ নিয়ে আগামীকাল ২৬ জানুয়ারি দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস ২০১৭। এ উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন আট বিভাগীয় শহরে ৬টি কাস্টম হাউস ও স্থলবন্দরসমূহে দিবসটি পালনে র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হবে। আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসে প্রতিবারের ন্যায় একটি বিশেষ প্রাসঙ্গিক বিষয়কে প্রতিপাদ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ডাটা এ্যানালাইসিস ফর এফেক্টিভ বর্ডার ম্যানেজমেন্ট।’
×