ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এফবিসিসিআইয়ের আলোচনা সভায় বক্তাদের অভিমত

সকল পদে সরাসরি ভোট দিতে চান ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

সকল পদে সরাসরি ভোট দিতে চান ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) আসন্ন নির্বাচনে সকল পদে সরাসরি ভোটের দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠনের নেতারা বলেছেন, ২০০২ সালে এফবিসিআইয়ের সকল ব্যবসায়ীদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তৎপরবর্তী সময়ে বারবার সরাসরি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলা হলেও সিন্ডিকেটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে সরকার চাইলে তা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারী আদেশের মাধ্যমে ২০০২ সালের পরিবর্তিত কালো আইনটি বাতিল করা হলে ব্যবসায়ীরা তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। অবসান হবে দীর্ঘ ১৪ বছরের অচলবস্থার। একইসঙ্গে সংস্কারের মাধ্যমে এই সংগঠনে ছোঁয়া লাগতে পারে ডিজিটাল প্রযুক্তির। তবে অধিকাংশ নেতাই সরাসরি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বললেও এই অধিকার ফিরে পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তারা বলেছেন, দীর্ঘ ১৪ বছরে সরাসরি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। কবে এই অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এটি একটি দীর্ঘ ও চলমান প্রক্রিয়া। আর সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা ঠিক নয়। দাবি আদায়ের এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বোর্ড মিটিংয়ে দাবি তুলতে হবে জোরালোভাবে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে এফবিসিসিআই রিফর্মস বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি এফবিসিসিআই নির্বাচনে সকল পদে সরাসরি ভোট চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। এফবিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, প্রথম সহ-সভপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সাবেক সহ-সভাপতি কাজী শফিকুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান আহমেদ, সাবেক সহ-সভাপতি আবু আলম চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ওমেন চেম্বারের সভাপতি মিসেস সেলিমা আহমেদ, সাবেক পরিচালক দোলোয়ার হোসেন, পরিচালক শেখ ফাহিম, পরিচালক তোসাদ্দেক হোসেন টিটু, তরুণ ব্যবসায়ী নেতা আমজাদ হোসেন, পরিচালক আমিন হেলালী, মোহাম্মদ ফারুক ইকবাল, খোরশেদ আলী মোল্লা, শাহ আলম হোসেন ভূঁইয়া, এস এম আক্কাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ। বক্তারা জানান, ২৮ জানুয়ারি এফবিসিসিআইয়ের বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা ওই মিটিংয়ে সরাসরি ভোটের দাবিতে পরিচালকদের জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। আলোচনা সভায় এক ব্যবসায়ী নেতার বক্তব্যের জের ধরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এফবিসিসিআইয়ের এই আলোচনায় বহিরাগতদের আগমণ নিয়েও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সূত্রমতে, আসন্ন নির্বাচনে শীর্ষ এই সংগঠনের সভাপতি পদে সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন ও প্রথম সহ-সভপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আভাস পাওয়া গেছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে ব্যবসায়ীদের কথাই বলতে হবে, সবাই এফবিসিসিআইয়ের সংস্কার চায়, সরাসরি ভোটে নির্বাচন চায়। আমি মনে করি, এই সংগঠনে সঠিক নেতৃত্ব আসা উচিত। সরাসরি নির্বাচন যদি হয়, আমি নিজেকে এই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। সংগঠনের প্রথম সহ-সভপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ২০০২ সালে যে আইনটা করা হয়েছিল সেই ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। নমিনেটেড, নন-নমিনেটেড, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বলে যেভাবে নিজেরা নিজেদের বিভক্ত করছি, তা কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন বয়কট কখনই সফলতা বয়ে আনতে পারে না। আপনার জাতীয় নির্বাচনে তার প্রভাব দেখেছেন। সমস্ত ব্যবসায়ী সংগঠন বা প্রতিনিধিকে এক হতে হবে। সরাসরি ভোটের পরিবেশ তৈরি হোক। আমরা কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসছি এটা ঠিক নয়। আমি নৈতিকভাবে আপনাদের পাশে থাকব। সরাসরি নির্বাচনের দাবি আদায় সহজ নয়, খুব কঠিন। তবে আপনাদের পাশে এক হয়ে কাজ করব। সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০২ সালের পরিবর্তিত আইনটি বাতিল করলেই ব্যবসায়ীরা তাদের সরাসরি ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীকে একটি সার্কুলার জারি করতে হবে। সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সরাসরি ভোটে নির্বাচন হবে কি হবে না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশ ওমেন চেম্বারের সভাপতি মিসেস সেলিমা আহমেদ বলেন, আমরা প্যানেল ভোট দিই, একক ভোট নয়। ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যারা এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন সেকারণে সবাই ব্যর্থ। তারা কেউ ব্যবসায়ীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারেননি। গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি, সবাই একসঙ্গে কাজ করলে প্রাণের দাবি পূরণ হবে। এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শেখ ফাহিম বলেন, সংগঠনে যারা শক্তিশালী নয়, তাদের শক্তিশালী করতে সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। ভোটার তালিকা নিয়েও কিছু অভিযোগ রয়েছে, তা সংশোধন করতে হবে। কোনক্রমেই নির্বাচনের তারিখ পেছানো যাবে না, এমন নিয়ম করতে হবে। যাতে করে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ভোট দিতে পারে। ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ কে মাথায় রেখে শীর্ষ এই সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে সবকিছুতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ঠিক নয়। সব জায়গায় প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবহার বন্ধ করুন। তিনি বলেন, সরাসরি ভোটের কোন বিকল্প নেই। তবে এটাকে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেলতে হবে। তরুণ ব্যবসায়ী নেতা আমজাদ হোসেন বলেন, নির্বাচন আসার পর জেনারেল বডির কদর বেড়ে যায়। সংগঠনটির সংস্কার নিয়ে আমরা সন্দিহান। ’৭৩ সালে এই সংগঠনের যাত্রার সময় কাজকর্ম যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমন। এখনও চিঠির মাধ্যমে দাওয়াতপত্র পাঠানে হয়, ই-মেইল করে দেওয়া হয় না। তাই দ্রুত সময়ে এফবিসিসিআইয়ের সকল কর্মকা-কে ডিজিটাল করতে হবে।
×