ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা

যশোরে গাইড বই বিক্রি করতে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে মাঠে প্রকাশনী

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

যশোরে গাইড বই বিক্রি করতে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে মাঠে প্রকাশনী

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা প্রশাসন তথা সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে সহায়ক বইয়ের নামে কাজল ব্রাদার্স অনুপম সিরিজ গাইড দিয়ে যশোরের বই বাজার সয়লাব করা হয়েছে। ডজন দুয়েক লোক নিয়োগ দিয়ে যশোর ঝিনেদা মাগুরা ও নড়াইলে অনুপম সিরিজের পাঁচ কোটি টাকার বই বিক্রির টার্গেট নিয়ে নেমেছে এই প্রকাশনী। ইতোমধ্যে প্রকাশনীর যশোরের এরিয়া ম্যানেজার ইমরুল ও যশোর সদরের দায়িত্বে নিয়োজিত আনিসুর রহমান অর্ধকোটি টাকা ছড়িয়েছে এ অঞ্চলের চিহ্নিত কিছু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানদের কাছে। সূত্র জানায়, সহায়ক বইকে না বলতে জেলা প্রশাসকের কাছে শপথ নেয়ার পরও চড়া মূল্যের কথিত সৃজনশীল গাইড শিক্ষার্থীদের কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকরা। অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকরা লাভবান হয়ে কাজল ব্রাদার্সের অনুপম সিরিজের সহায়ক বইয়ের ক্লাসওয়ারি তালিকা ছাত্রদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। যদিও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, এ কর্মকা-ের সঙ্গে শিক্ষকরা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে দু’একটি বিষয় ছাড়া বেশিরভাগ বিষয় সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা হয়। শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যা পরিহার, গাইড বই ও কোচিং নির্ভরতা কমানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সৃজনশীল পদ্ধতির প্রচলন করলেও তা ভেস্তে দিচ্ছে প্রকাশনী ও অসাধু শিক্ষকরা। নিজেরা লাভবান হতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে কথিত সৃজনশীল গাইড নির্ভর করে তুলেছেন শিক্ষকরা। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছর কাজল ব্রাদার্স তাদের কর্মী বাহিনী মাঠে নামিয়েছে বান্ডিল বান্ডিল টাকা দিয়ে। বিভিন্ন লাইব্রেরিতে মোটা অংকের কমিশন ও উপঢৌকন দিয়ে এরা গাইড ঢোকাচ্ছে। আর তা বিক্রি ত্বরান্বিত করতে অনুপমের যশোর অঞ্চলের ম্যানেজার ইমরুল তার সহযোগী যশোর সদর উপজেলার পাগলাদহের আনিসুর রহমানসহ একডজন কর্মীর টিম বৃহত্তর যশোরের চার জেলায় পাঁচ কোটি টাকার অনুপম সহায়ক বই বিক্রির টার্গেট হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা যশোরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বড় দুটি প্রভাবশালী স্কুল ছাড়াও নিউটাউন বালিকা বিদ্যালয়, চুড়ামনকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সখিনা বালিকা বিদ্যালয়সহ অন্তত ২০ প্রতিষ্ঠানকে ম্যানেজ করেছে। সদর উপজেলার স্কুল ছাড়াও অন্যান্য উপজেলা ও অন্য তিনটি জেলার অর্ধশত স্কুল এই প্রকাশনীর কব্জায় আনতে সক্ষম হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। এ ব্যাপারে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রীর বাবা হাসিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শিক্ষানুরাগী শরীফ উদ্দিন বেলাল ও সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রের বাবা জানান, শিক্ষকরা বলছেন গাইড থেকেই প্রশ্ন আসবে। ফলে গাইড না কিনলে পরীক্ষায় ভাল করা যাবে না। আবার তারাই বুক লিস্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন। তারা জানান, অনুপম গাইড ছাড়াও অনেক প্রকাশনীর লোকজন দাপটের সঙ্গে ঘুরছে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারের সামনে বসে খোশগল্প করছে এমন চিত্রও চোখে পড়ছে। তারা আরও বলেন, এক সেট গাইডের দাম এত চড়া যে গরিব অভিভাবকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু সন্তানের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে কষ্ট হলেও সবাইকে তা কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে কথা হয় যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম টুকুর সঙ্গে। তিনি বলেছেন, এ ধরনের অভিযোগ তার কাছেও এসেছে। ইতোমধ্যে তিনি একটি বিশেষ টিম করে স্কুলে স্কুলে পরিদর্শন শুরু করেছেন। শুধু অনুপম গাইডই নয়, কোন সহায়ক গাইড, সহায়ক বই গ্রহণযোগ্য নয়। কোন শিক্ষক গাইড বিক্রেতা বা প্রকাশনীর সঙ্গে সখ্য গড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া প্রকাশনী ও নোট গাইড বিক্রি প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরিতেও অভিযান চালানোর চিন্তা ভাবনা করছে টাস্ক ফোর্স। একই ধরনের বক্তব্য দেন যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার অধিকারী।
×