ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ায় চীনকে নিয়ে চুক্তি ঢেলে সাজার আশা অস্ট্রেলিয়ার

টিপিপি নিয়ে হাল ছাড়েনি জাপান

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

টিপিপি নিয়ে হাল ছাড়েনি জাপান

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি মুক্ত বাণিজ্য সমর্থন অব্যাহত রাখবেন এবং ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বোঝাতে চাইবেন। ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্তও সত্ত্বেও আবে ঐ সংকল্প ব্যক্ত করলেন। ট্রাম্প সোমবার ১২ জাতি টিপিপি থেকে তার দেশকে সরিয়ে নেন। এদিকে, অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই টিপিপিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর আশা ব্যক্ত করেছে এবং ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তি ত্যাগের পর চীনের জন্য চুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও এএফপির। আবে পার্লামেন্টে বলেন, তিনি টিপিপির অর্থনৈতিক ও সমরিক কৌশলগত তাৎপর্য সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধারণা অবগত হতে চাইবেন। সরকারের মুখপাত্র কোইচি হাগিউদা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ‘অর্থহীন’ এবং টোকিও ওয়াশিংটনকে বাদ দিয়ে চুক্তিটি সংশোধন করার কথা ভাবছে না। এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে হাগিউদা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া চুক্তিটি সুযোগ-সুবিধার মৌলিক ভারসাম্য হারাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী হিরোশিসে সেকো জানান যে, আবে সোমবার অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং টিপিপির গুরুত্ব নিশ্চিত করেছেন। আবে জাপানে অনেকের বিশেষত কৃষকদের আপত্তির মুখে টিপিপি সমর্থন করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য চেষ্টা চালান। চুক্তিটির শুল্ক হ্রাস বিধান কার্যকর করা হলে কৃষকদের যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হতো। তবে চুক্তিটির ভেঙ্গে পড়ায় জরিপে তার জনপ্রিয়তার ক্ষতি হয়নি। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে আবে বলেন, জাপান অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে। তিনি টিপিপিকে এমন এক বৈশ্বিক আদর্শ বলে গণ্য করেন, যা অন্যান্য চুক্তির অনুসরণ করা উচিত। আবে বলেন, টিপিপির ভিত্তিতে আমরা অবাধ বাণিজ্য নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে শীঘ্রই একটি চুক্তি করার উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, জাপান রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) আওতায় এক উচ্চ পর্যায়ের চুক্তি করতেও চায়। এ প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় চীন, জাপান ও অন্যান্য এশীয় দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা। জাপানী কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে, আরসিইপি চুক্তিতে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের নিরাপত্তাসহ টিপিপির অন্যান্য দিককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবে বলেন, বিশ্বজুড়ে মুক্ত বাণিজ্যের এক নেতৃস্থানীয় প্রবক্তা হিসাবে আমরা ক্রমশ কৃষি সংস্কারসহ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি জোরদার করার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করব। এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী সেকো জাপানের বাজার বিশেষত আমেরিকান গাড়িগুলোর জন্য অনুচিতভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এমন ইঙ্গিতপূর্ণ ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেকো বলেন, জাপান মার্কিন অটো মোবাইলের ওপর কোন শুল্ক আরোপ করেনি। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেন, তার সরকার টিপিপি কিভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে জাপান নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ চুক্তির্ভুক্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনায় জড়িত রয়েছে। টার্নবুল ক্যানবেরাতে সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে মার্কিন নীতি কালক্রমে বদলাতে পারে, ঠিক যেমন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি প্রসঙ্গে করেছিল। তিনি আরও বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও রিপাবলিকানরা টিপিপিকে সমর্থন করেছেন। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই টিপিপিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, চীনের টিপিপিতে যোগ দেয়ার অবশ্যই সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর স্বাক্ষরিত ঐ চুক্তিকে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব রোধের এক উপায় হিসাবে দেখা হয়, কিন্তু সেটি কখনও কার্যকর হয়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী স্টিভেন সিওবো অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মেক্সিকো ও অন্যান্য দেশ ডাভোসে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে একটি টিপিপি ‘টুয়েলভ মাইনাস ওয়ান’ চুক্তির ধারণার পক্ষে প্রচার চালায়। ট্রাম্প বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও অনুকূল শর্ত পেতে টিপিপির স্বাক্ষরদাতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বন্দোবস্ত করার বিষয়ে আলোচনা করবেন। দক্ষিণ চীন সাগরে স্বার্থ রক্ষা করবে ওয়াশিংটন ॥ হোয়াইট হাউস চীনের প্রতি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছে, দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষা করবে ওয়াশিংটন এবং বাণিজ্য হবে অবশ্য দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। মুখপাত্র শন স্পাইসার বেজিংয়ের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠিন অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আমরা দক্ষিণ চীন সাগরে আমাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, হ্যাঁ ওই দ্বীপগুলোর অবস্থান সত্যিকারভাবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকলে এবং চীনের যথার্থ অংশ না হলে যেগুলোতে একটি দেশের নিয়ন্ত্রণ থেকে আন্তর্জাতিক স্বার্থ আমরা অবশ্য নিশ্চিত করব। চীন এর প্রতিবেশী দেশগুলোর দাবিকৃত জলসীমাসহ তথা-কথিত নাইন ড্যাশ লাইনের ভেতের দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তৃত এলাকা দাবি করছে।
×