ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা রক্ষায় ওআইসি

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গা রক্ষায় ওআইসি

জাতিসংঘের দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত গোষ্ঠী হচ্ছে রোহিঙ্গারা অথচ সেখানে নির্যাতন বন্ধে ও শান্তি সম্প্রীতি স্থাপনেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বহাল রাখার জন্য জাতিসংঘ কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাংলাভাষী কবি আবুল হাসান সেই তেহাত্তর সালে লিখেছিলেন, ‘মৃত্যু আমাকে নেবে জাতিসংঘ আমাকে নেবে না।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা বন্ধেও জাতিসংঘ ছিল নির্বিকার আজকের মতোই। তাই বলা যায়, আত্মহনন ছাড়া আর কোন পথই খোলা নেই রোহিঙ্গাদের জন্য। নীরবে ঘটে যাওয়া মানবিক ট্র্যাজেডি বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায় দূরে থাক ইসলামী দেশগুলোও কার্যকর ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কামিয়াব নয়। গণহত্যা বন্ধ করার কোন আবেদন নিবেদনেই কর্ণপাত করছে না মিয়ানমারের জান্তা ও গণতন্ত্রীকামী মিশ্রিত সরকার। এখনও রোহিঙ্গাদের ওপর সর্বপ্রকার বৈষম্য এবং হামলা বন্ধের জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশ নামক জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত দেশটিকে। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় আর কোনভাবেই বরং এটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় আজ। ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের জান্তা শাসকের সৃষ্ট জাতিগত দাঙ্গার ঘটনায় দু’দফায় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল। আলোচনার মাধ্যমে তখন নামমাত্র অনেককে ফেরত পাঠালেও প্রচুর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিয়ানমার সফরের সময় সমস্যাটি যথেষ্ট গুরুত্ব পেলেও দুঃখজনক হলো যে, এ ব্যাপারে খুব একটা অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। মিয়ানমারের ‘এথনিক ক্লিনজিং’ তৎপরতার কারণে গত তিন দশকে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক কমিশনও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেয়নি। তারা যেন চায় শরণার্থীর স্রোত বাড়ুক। তাতে কমিশনের লোকজন কাজ পায় এবং অর্থবরাদ্দ হয়। বিশ্ব শরণার্থীমুক্ত হোকÑ এমনটা তারা চায় বলে মনে হয় না। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো চাপ প্রয়োগ করলে মিয়ানমার সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হতো। ১৯৮২ সালে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু ঘোষণা করে। তাদের ভোটাধিকার ভ্রমণ, বিয়ে ও সন্তান প্রতিপালনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। সরকারী চাকরিতে তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি ঐতিহ্য মুছে ফেলার জন্য মাত্র সাত শত বছরের পুরনো নাম আরাকান মুছে রাখাইন করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে আউং সান সুচি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। কিন্তু তাদের যথাযথভাবে কাজ করতে দেয়া হয়নি। আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্র হলেও মিয়ানমার অন্য সদস্যদের চাপে কুপোকাত হচ্ছে না। রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও তাদের প্রতি নৃশংসতার পরিপ্রেক্ষিতে মানামিয়ায় বিশেষ বৈঠক আয়োজন করে ৫৭টি মুসলিম দেশের মোট ইসলামী সম্মেলন সংস্থা তথা ওআইসি বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতি ১০ দফার একগুচ্ছ আহ্বান জানানোর বাইরে জোরালো কোন অবস্থান নিতে পারেনি। অতীতেও ওআইসি এমন আহ্বান জানালেও নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ হয়নি বরং জোর গলায় মিয়ানমার বলে আসছে, কোন নির্যাতন হয়নি, হচ্ছে না। সর্বশেষ জাতিসংঘের বিশেষ দূত মিয়ানমারে ১২ দিনের সফর শেষে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য মিয়ানমার সরকারের সমালোচনা করলেও সমাধানের কোন পন্থা দেখাননি। মিয়ানমার সরকারের এক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে ফেরত নেয়ার কথা বলেছেন। এ সবই মনে হয় লোক দেখানো। আসলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিংঘের পদক্ষেপ ছাড়া সমস্যার সমাধান দুরূহ।
×