ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জনবান্ধব পুলিশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

জনবান্ধব পুলিশ

অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেও অনেক সময় ব্যর্থতা মেনে নেয় পুলিশ। এই ব্যর্থতা পুলিশ বাহিনীর ভেতর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। গত বছর পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে নিজ কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, দখলবাজ ক্ষমতা অপব্যবহারকারী আওয়ামী লীগার হলেও প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গুটিকতক নীতিভ্রষ্ট দুর্বৃত্ত দলীয় প্রভাবশালীর কারণেই দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের বিপক্ষে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে। পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশের সেবাকে আরও জনবান্ধব করতে পরামর্শ দিয়েছেন। জনসেবা করার মানসিকতা লালনের তাগিদও দেন। শান্তিময় ও নিরাপদ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে সরকার আরও জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান। সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে এটাও সত্য সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে একতরফাভাবে কেবল পুলিশের দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিও অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। মনে রাখা চাই শুধু দেশেই নয়, গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় প্রদান করে বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে সামাজিকভাবে দুর্নামের ঢোলই বেশি বাজে; প্রশংসনীয় ভূমিকা চাপা পড়ে যায়। নিকট অতীতে অপরাধ দমনে পুলিশের চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে বেড়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ অপরাধীর পেছনে ছোটেÑ পুলিশের পেশার এই বৈশিষ্ট্যের দিকে সমাজের সহানুভূতির দৃষ্টি তেমন নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মান্য করে জনবল, সরঞ্জাম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি কাটানোর পাশাপাশি পুলিশের সদাচরণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিক গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ুক; পুলিশ হয়ে উঠুক সমাজবান্ধব- এমন প্রত্যাশা দেশের নাগরিকদেরও।
×