ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ ॥ একটি কারখানার ৯২৮ জন শ্রমিক ছাঁটাই

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

নারায়ণগঞ্জে দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ ॥ একটি কারখানার ৯২৮ জন শ্রমিক ছাঁটাই

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জে তিন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় সিনহা অ্যান্ড ওপেক্স গ্রুপের শ্রমিকরা বর্ধিত বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একই উপজেলার মেঘনা শিল্পনগরী এলাকায় আনন্দ শিপইয়ার্ডের শ্রমিকরাও বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অপরদিকে ফতুল্লার ক্রোনী সুয়েটার গার্মেন্টেসের ৯২৮ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রর্দশন করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবার তারা বিক্ষোভ করে। জানা গেছে, কাঁচপুর এলাকায় সিনহা অ্যান্ড ওপেক্স গ্রুপের শ্রমিকরা১০% বর্ধিত বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ পুলিশ ও সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় শ্রমিকরা মহাসড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। শ্রমিক তৈয়ব ও তানভীর জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা ১০% বোনাসের দাবিৎী করে আসলেও মালিক পক্ষ কালক্ষেপণ করছেন। সিনহা অ্যান্ড ওপেক্স গ্রুপে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্ণেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেন জানান, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের ৫% বোনাস পরিশোধ করে আসছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা অযুক্তিকভাবে ১০% বোনাস দাবী করে। শ্রমিকদের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কারখানা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে একই উপজেলার মেঘনা এলাকায় আনন্দ শিপইয়ার্ডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। শ্রমিক সাইদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় দোকান বাকি ও বাসা ভাড়া দিতে পারছে না। বর্তমানে দোকানদার ও বাড়ির মালিকরা তাদের পাওনা টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন দেয়ার আশ্বাস দিলেও বেতন না দিয়ে তালবাহানা শুরু করে। বাধ্য হয়ে কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছি। আনন্দ শিপইয়ার্ডের শ্রমিক অহিদুল্লাহ ও আবু তাহের বলেন, শ্রমিকরা নিয়মি বেতন না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। মালিক পক্ষ একাধিকবার বেতন দেওয়ার কথা বলে কথা রাখেননি। বকেয়া বেতনের দাবীতেই আন্দোলনে নেমেছি। অপরদিকে ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত ক্রোনী সুয়েটার্স নামের একটি রফতানীমুখী গার্মেন্টসের ৯২৮ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে প্রতিষ্ঠানের ফটকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। কারখানাটির মালিক বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি আসলাম সানি। ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টসে ওয়ার্কার্স নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সেন্টু জানান, মঙ্গলবার সকালে কারখানাটির ফটকে শ্রম আইনের ২০ ধারা মোতাবেক ৯২৮ জন শ্রমিককে ছাটাইয়ের নোটিশ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ফতুল্লার আলীগঞ্জস্থ লেবার হলে সমবেত হয়। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে। শিল্প পুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইলতুকমিস জানান, ফতুল্লার ক্রোনী সুয়েটাসের কারখানা থেকে ৯২৮ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। উন্নতনামের মেকানিক্যাল মেশিন আনা হচ্ছে। ওখানে জনবল লাগবে না। সম্পুর্ণ মেকানাইজ, জাপানি মেশিন। যেই বিভাগে মেশিনকে আনা হচ্ছে ওই বিভাগের শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী ২০ ধারা অনুযায়ী ২ মাসের বেসিক দিয়ে শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। কাঁচপুরে সিনহা গ্রুপের কারখানায় একটি ফ্লোরের শ্রমিকদের ছুটি ছিল। পরে ওই বিল্ডিং এর সকল শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করে। শ্রমিকরা জানিয়ে দেয় তারা কাজে যোগ দেবে না। পরে শ্রমিকরা চলে যায়। আনন্দ শিপইয়ার্ড কারখানার দু’ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তারা বেতন ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। পরে আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
×