ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ষাঁড়ের জন্য উত্তাল তামিলনাড়ু, হিংসার আবহেই পাশ হল আইন

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

ষাঁড়ের জন্য উত্তাল তামিলনাড়ু, হিংসার আবহেই পাশ হল আইন

অনলাইন ডেস্ক \ ষাঁড়কে বাগে আনার অধিকার ফেরত চেয়ে পথে নেমেছিল তামিল জনতা। সেই জনতাকে বাগে আনতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে গেল তামিলনাড়ু সরকার। শাসক দল, বিরোধী দল— কার্যত কাউকেই পাত্তা না দিয়ে জনতা বুঝিয়ে দিল, জাল্লিকাট্টু আর জাল্লিকাট্টুতে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক দিনের জমে থাকা ক্ষোভ ঠিকরে বেরোচ্ছে একটা উপলক্ষ খুঁজে নিয়ে। নইলে তিন বছর বন্ধ থাকার পরে বহু আন্দোলন-অবরোধ পেরিয়ে অর্ডিন্যান্স পাশ করে রবিবারই শুরু হয়ে গিয়েছিল জাল্লিকাট্টু। ষাঁড়কে বশ করার লড়াই। কিন্তু অর্ডিন্যান্সকে বিশ্বাস করেনি মানুষ। তাই রবিবার সব জায়গায় জাল্লিকাট্টু শুরুও হয়নি। তার মধ্যেও অবশ্য ষাঁড়ের গুঁতোয় দু’জন মারা গিয়েছিলেন। আহত আরও এক জন মারা যান আজ। কিন্তু তাতে জনতার আবেগে ভাটা পড়েনি। তাদের একটাই বক্তব্য, অর্ডিন্যান্স কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের দাবিতেই তাই অব্যাহত ছিল বিক্ষোভ। সোমবার যা রীতিমতো হিংসাত্মক হয়ে উঠল। যদিও মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম নিজে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এই অর্ডিন্যান্স আইনে পরিণত করা হবে। সোমবার বিধানসভায় জাল্লিকাট্টু বিল পাশ হওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। বিকেলে বিল পাশ হয়েও যায়। তবু সকাল থেকে মেরিনা সৈকতের দখল ছাড়েননি আন্দোলনকারীরা। বিধানসভা ভবনের রাস্তাটা মেরিনা সৈকতের পাশ দিয়েই। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রস্তুতি শুরু করার চাপ রয়েছে। এমতাবস্থায় এ দিন সকালে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হঠাতে গিয়েছিল। তাতে ফল হয়েছে উল্টো। মেরিনা সৈকতে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা ব্যারিকে়ড দিয়ে বন্ধ করে দিতেই তর্কাতর্কি শুরু করে দেন বিক্ষোভকারীরা। সৈকতে মানবশৃঙ্খল গড়ে তোলেন তাঁরা। কেউ কেউ শুয়ে পড়েন। কেউ কেউ হুমকি দিতে থাকেন সমুদ্রে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। পুলিশের দিকে উড়ে আসে পাথর-বোতল। পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে পুলিশও। চলে লাঠি। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে জখম হন ১০ আন্দোলনকারী এবং ২০ পুলিশকর্মী। সৈকত সংলগ্ন আইস হাউস থানা চত্বরে ৩০টি মোটরবাইক ও গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয় নাদুকুপ্পমের কাছেও। একটি বাস লক্ষ করেও পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করে জনতা। শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে যানজট। ঝামেলার আশঙ্কায় এ দিন বন্ধ ছিল চেন্নাইয়ের অনেক স্কুল। হিংসা ছড়িয়েছে কোয়ম্বাত্তূর, ইরোড, মাদুরাইয়ের আলাঙ্গানাল্লুরেও। কোয়েম্বাত্তূরে ভিওসি পার্কে বিক্ষোভ-অবস্থান চলছিল। পুলিশ তা তুলতে গেলে পাথর ছুড়তে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। পাল্টা লাঠি চালায় পুলিশ। প্রতিবাদে এয়ারপোর্ট রোডে অবস্থানে বসেন একদল ছাত্র। তাঁদের হটাতে মৃদু লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সেই ‘অত্যাচারের’ প্রতিবাদে আবার গাঁধীপুরমের সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ডে ধর্নায় বসে পড়েন আরও ২০০ জন। আলাঙ্গানাল্লুরেও পুলিশের দিকে উড়ে আসে পাথর। দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধে জখম হন পুলিশকর্মী-সহ ২০ জন। পনীরসেলভমকে কাল এই আলাঙ্গানাল্লুর থেকেই জাল্লিকাট্টু উদ্বোধন না করে ফিরতে হয়েছিল । জাল্লিকাট্টুকে কেন্দ্র করে কেন এত বড় গণবিক্ষোভ? অনেকেই মনে করছেন, তামিল সত্তা ও তামিল সংস্কৃতিকে ঘিরে ভাবাবেগ এবং দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বঞ্চনা ও অবহেলার বোধই এর মূলে। সে কারণে এডিএমকে বা ডিএমকে, কেউই শত চেষ্টা করেও এই আন্দোলনে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারেনি। জনতা কোনও দলীয় নেতৃত্বের তোয়াক্কাই করেনি। চেন্নাই পুলিশ অতি-বাম প্ররোচনার তত্ত্ব সামনে আনলেও আন্দোলনের ব্যাপ্তিকে তা ব্যাখ্যা করতে পারেনি। পিএমকে নেতা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্বুমণি রামাডস কবুল করছেন, ‘‘কোনও দল, এমনকী এডিএমকে আর ডিএমকে-কেও আন্দোলনের জায়গায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এতেই প্রমাণ, অরাজনৈতিক আন্দোলন এটা।’’ তবে এ দিন পরিস্থিতি যে ভাবে বাঁধ ভেঙে উত্তপ্ত হয়ে উঠল, তাতে উদ্বিগ্ন অনেকেই। রজনীকান্ত, কমল হাসনরা অনুরোধ করছেন, বিক্ষোভকারীরা এ বার যাতে বাড়ি ফিরে যান। অবশ্য একই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকার নিন্দাও করেছেন। একই পথ নিয়েছে বিরোধী দল ডিএমকে-ও। বিধানসভায় জাল্লিকাট্টু বিল পাশের সময় পুলিশি ভূমিকার প্রতিবাদে সেখানে ছিল না তারা। হিংসা নিয়েও বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে ডিএমকে। আন্দোলন রাজনৈতিক হোক না হোক, তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা কিন্তু থেমে নেই। তবে প্রশাসন আশা করছে, কাল পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ফাঁকা হবে সৈকত। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×