ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমলায় বিক্রি কম

দুগ্ধ খামারিরা বিপাকে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

দুগ্ধ খামারিরা বিপাকে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে নিঃস্ব ও ভূমিহীন পরিবারগুলো নিজেদের স্বাবলম্বী গড়ে তুলতে পরিবারভিত্তিক ছোট-বড় অসংখ্য দুগ্ধখামার গড়ে তুলেছে। প্রতিটি পরিবারই হয়ে উঠেছে যেন একেকটি দুগ্ধখামার। আর এ দুধই তাদের স্বপ্ন, জীবন। কিন্তু দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী পালনকারী পরিবারগুলো এখন চরম বিপাকে পড়েছে। প্রতিদিন ১৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হলেও তা বিক্রি এবং ন্যায্যমূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এখানে দুগ্ধ শীতলীকরণ (চিলিং পয়েন্ট) কেন্দ্র না থাকার ফলে দুগ্ধখামারিরা গাভী পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। প্রতিদিন উৎপাদিত দুধ সময় মতো বিক্রি না হওয়ায় অনেক দুধ নষ্ট হচ্ছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা তিস্তা নদী বিধৌত বাংলাদেশের একটি অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। উজান হতে নেমে আসা পানিতে তিস্তা নদীতে অকাল বন্যা দেখা দেয়। বন্যার ফলে চরের পতিত জমি এবং আবাদি জমি পানির নিচে ডুবে যায় এবং ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এক সময় সবুজ ঘাসের সমারোহ ঘটে। ফলে উপজেলাটিতে ছোট-বড় ৯২টি বিদেশী জাতের গরুর খামার গড়ে উঠে। সোমবার সরেজমিনে গেলে ডিমলার দুগ্ধখামারিদের মধ্যে খগাখরিবাড়ি মেম্বারপাড়ার মেরিনা বেগম জানায় তিনি দুটি বিদেশী গাভী পালন করছেন। প্রতিদিন তার দুধ উৎপাদন হয় ৯ থেকে ১১ লিটার। বাবুরহাট এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, তার খামারে ১৯টি বিদেশী গাভী থেকে প্রতিদিন ৯০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। কুমারপাড়ার আজিজুল হক জানান তার খামারের ১৭টি গাভীর প্রতিদিন ৬৫ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এ রকম আরও অনেক দুগ্ধখামারি বিভিন্ন পরিবারের হিসাবে দুগ্ধ উৎপাদনের কথা জানায়। তারা সকলে বলেন, আমরা তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে এক সময় নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলাম। বেসরকারীভাবে ঋণের মাধ্যমে গাভী পালনে পরিবারভিক্তিক আমরা সকলে খামার গড়ে তুলি। এতে অনেকখানি স্বাবলম্বী হয়ে উঠি। এখন প্রচুর দুধ উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা দুধের মরণের কবলে পড়ছি। কারণ এখন উৎপাদিত গাভীর দুধ বাজারজাত করতে পারছি না। স্থানীয় হাট বাজারে হোটেল ও বাসাবাড়িতে প্রতিদিন ১৫ হাজারের ওপর উৎপাদিক দুধ বিক্রি হয় না। আবার দামও কম। লিটার প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকায় দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে গাভী পালনের খরচ উঠে না। এছাড়া উৎপাদিত দুধ বিক্রি না হওয়ায় অসংখ্য দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা জানায় ডিমলায় সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে কোন দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র (চিলিং পয়েন্ট) না থাকার কারণে দুধের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সরকারী পর্যায়ে খামারিদের উৎসাহিত করার জন্য ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও তা খামারিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা। উপজেলা প্রাণী সম্পদের এক হিসাব অনুসারে দেখা যায় ডিমলায় গবাদি পশুর সংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার ৩৫০টি। দৈনিক দুধ উৎপাদন হচ্ছে পনেরো হাজার ২০০ লিটার। বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এ ব্যাপারে কথা হয় ডিমলা উপজেলার পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মনের সঙ্গে। তিনি জানান, বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্প ডিমলা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের খামারিদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। খামারিরা যেন দুধের ন্যায্যমূল্য পায় এবং সরকারের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিতে পারে এজন্য গত বছরের ২৯ অক্টোবর মিল্কভিটা লিমিটেডের রংপুর চিলিং পয়েন্টের সিনিয়র ব্যবস্থাপক ডাঃ শ্যামল কুমার রায়ের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ডিমলা উপজেলা পরিদর্শন করেন। তারা সকলে এখানে সরকারী উদ্যোগে একটি চিলিং পয়েন্ট স্থাপন করতে উপরে সুপারিশনামা প্রেরণ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে যেহেতু ৭০ ভাগ শিশু খাদ্য বিশেষ করে দুধ বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সেহেতু এখানকার খামারিদের যদি উৎসাহ-উদ্দীপনা দেয়া যায় তাহলে দুধের জন্য সম্ভাবনাময় একটি এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। পাশাপাশি তিস্তার চরাঞ্চলের দুগ্ধখামারিদের দুধের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করলে ব্যাপকভাবে গাভী পালন করবে দরিদ্র ও হতদরিদ্র নারীরা। তিস্তার চলাঞ্চলের পরিত্যক্ত জমিতে গাভী পালন করে অনেক হতদরিদ্র পরিবারগুলো স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
×