ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

’২০ সালের মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

’২০ সালের মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের চাহিদার জ্বালানি তেল সম্পূর্ণভাবে আমদানিনির্ভর। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আকারে এ তেল আমদানির দায়িত্বে রয়েছে বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন)। আমদানির পর অপরিশোধিত ক্রুড আকারের তেল পরিশোধনের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। এটি দেশে জ্বালানি তেলের একমাত্র পরিশোধনাগার। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়ে ’৬৮ সালে উৎপাদন শুরু হয়। এ পরিশোধনাগারের লাইফ টাইম শেষ হয়ে গেছে বহু আগে। প্রতি বছর বিএমআরইয়ের মাধ্যমে এবং পুরনো যন্ত্রাংশ সরিয়ে নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজনের মাধ্যমে এটিকে উৎপাদন উপযোগী করে রাখা হয়। কিন্তু এরপরও নানা সমস্যা ঘিরে আছে এ প্রকল্প। শুরুতে এ প্রকল্পে বছরে ১৫ লাখ টন পরিশোধনের ক্ষমতা ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে তা হ্রাস পেয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ লাখ টনে নেমে এসেছে। এদিকে, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বেড়ে চলেছে। ফলে রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সঙ্গত কারণে রিফাইনারির নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা শুরু হয় আগে থেকে। কিন্তু মোটা অঙ্কের অর্থ সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। ফলে সে চিন্তা কখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি। এভাবে চলে আসছে আরও ৭ বছর। অবশেষে রিফাইনারিতে পরিশোধন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে টেকনিপ ফ্রান্স-এর সঙ্গে সরকারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের টার্গেট নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রাথমিকভাবে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বৈদেশিক মুদ্রায় হবে দুই হাজার মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়ন যে কোন কারণে দীর্ঘায়িত হলে ব্যয়ভার আরও বেড়ে যাবে। বিপিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ইআরএলের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৩৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। অর্থাৎ বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ যুক্ত হবে। অর্থাৎ ৩০ লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পাবে। আর এতে প্রতি বছর বিপিসির সাশ্রয় হবে প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়সহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তা উঠে আসতে ছয় বছরের বেশি সময় নেবে না। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী দেশে বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে এ প্রকল্পের সম্মতি দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সাল থেকে বিপিসি কর্তৃপক্ষ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইআরএলের পরিশোধন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দফায় দফায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছিল। কিন্তু চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি সরকার। শেষ পর্যন্ত গত বুধবার সরকারের চূড়ান্ত সবুজ সঙ্কেতের পর টেকনিপ ফ্রান্সের সঙ্গে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়। বিপিসি জানিয়েছে, দেশে প্রতি বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করতে পারে ইআরএল। চাহিদার অবশিষ্ট তেল পরিশোধিত আকারে এবং ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১৩টি বেসরকারি রিফাইনারির মাধ্যমে পরিশোধন করে বিপিসি নিয়ন্ত্রিত তিনটি তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে বিপণন করা হয়ে থাকে। ভর্তুকির মাধ্যমে সরকারী নিয়ন্ত্রণে জ্বালানি তেলের বিপণন প্রক্রিয়ায় বিপিসির লোকসানের পরিমাণ পাহাড়সম। কিন্তু দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিষয় বিবেচনায় এনে প্রতিটি সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে আসছে। বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য যখন কমে যায়, তখন সরকার দেশে এর মূল্য না কমিয়ে লোকসানের পরিমাণ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যায়। এ নিয়ে জ্বালানি সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে সমালোচনা করলেও সরকার তাতে তেমন কর্ণপাত করেনি। এতে সরকারের লোকসান কমানোর বিষয়টি নীতিনির্ধারক মহলে প্রাধান্য দেয়া হয়। বিপিসি সূত্র আরও জানিয়েছে, ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অপরিশোধিত তেল পরিশোধন প্রক্রিয়ায় আরও বিভিন্ন ধরনের বায়োপ্রোডাক্ট উৎপাদন হয়। যার মধ্যে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিন, লুব অয়েল, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিন, এলপি গ্যাস উল্লেখযোগ্য। তবে জ্বালানি তেল ছাড়া অন্যান্য জ্বালানিজাতীয় পদার্থ বেসরকারী পর্যায়ে আমদানি উন্মুক্ত রয়েছে। জ্বালানি তেল বিপিসির মাধ্যমে আমদানির পর তা ইআরএলকে দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তিন তেল কোম্পানিকে দিয়ে বিপণন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যতম তেল বিপণন কোম্পানি যমুনা অয়েল কোম্পানি বিদেশী জয়েন্ট ভেঞ্চারে (যমুনা মবিল) লুব অয়েল উৎপাদন ও বিপণনে নিয়োজিত রয়েছে। অপরদিকে, জ্বালানি সেক্টরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকার অনেক দেরিতে হলেও রিফাইনারি সম্প্রসারণ বা এর দ্বিতীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়ে যে চুক্তি সম্পাদন করেছে তা বাস্তবায়নে কোন ধরনের ধীরগতি কাক্সিক্ষত নয়। কেননা, ৪৬ বছর আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে সরকারী পর্যায়ে যে জ্বালানি পরিশোধনাগারটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল তা আজও উৎপাদনে রয়েছে।
×