ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন

ঢামেকের বার্ন ইউনিটে অস্পষ্টস্বরে বিড়বিড় করছে দগ্ধ কিশোরী

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

ঢামেকের বার্ন ইউনিটে অস্পষ্টস্বরে বিড়বিড় করছে দগ্ধ কিশোরী

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অচেতন হয়ে শুয়ে আছে ১৩ বছরের এক কিশোরী। মুমূর্ষু অবস্থায় আপন মনেই বিড়বিড় করছে সে যা অস্পষ্ট। হাসপাতালের অন্য রোগীদের সঙ্গে এ্যাটেনডেন্ট থাকলেও তার সঙ্গে নেই মা, বোন অথবা পরিবারের কেউ। ১৯ জানুয়ারি তাকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর থেকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে এই কিশোরী মেয়েটি। তার পুরো পিঠ দগ্ধ সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন স্থানেও রয়েছে আঘাতের দাগ। ১৯ জানুয়ারি সকালে গেন্ডারিয়ার সীমান্ত খেলাঘর লাইব্রেরির সামনে তাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায় এলাকাবাসী। বেলা ১২টা নাগাদ লোকজন পুলিশে খবর দেয়। এরপর পুলিশ এসে মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবশেষে মেয়েটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে ঢামেক হাসপাতালে। শরীরে নির্যাতনের আলামত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুমান করা হচ্ছে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মেয়েটির সঙ্গে আছেন জাস্টিস ফর উইমেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। একজন বললেন, ‘হাসপাতালে মেয়েটির চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক চেষ্টার পর মাত্র তিন-চারটি কথা বলেছে সে। তার নাম সুমি, বাড়ি মানিকগঞ্জে। বাবার নাম রহমত। মেয়েটি আরও বলেছে, সে অন্তঃসত্ত্বা। তবে অবচেতন অবস্থায় ভয়ে সংকীর্ণ হতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া বিড়বিড় করে কথাও বলছে।’ সুমি নামের এ দগ্ধ কিশোরীর শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন হোসাইন ইমাম বললেন, ‘মেয়েটির শরীরে প্রায় ২২ শতাংশ পুড়েছে। পোড়ার দাগ অন্তত ৮-১০ দিনের পুরনো। কোন কোন জায়গায় সংক্রমণ হয়ে গেছে। অপুষ্টিসহ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মেয়েটি। তার মধ্যে জড়তা কাজ করছে, মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে সে গুছিয়ে কথাও বলতে পারছে না। আমরা তার শারীরিক সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়েছি। সব রিপোর্ট পেলেই চিকিৎসা পুরোদমে শুরু হবে। এছাড়া মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা কি-না এ বিষয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ’ ঢামেক হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই পা ফেলছেন গেন্ডারিয়া থানার উপপরিদর্শক মাসুদ রানা। ঘটনাস্থল থেকে তিনিই মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকবার মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। ভয় পাচ্ছে সে। ঠিকভাবে কিছুই বলতে পারছে না। এ অবস্থায় তো আর জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব নয়। তদন্ত কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই আমরা গেন্ডারিয়া এলাকার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মেয়েটির ছবি দেখিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’ সুমিকে ১৯ জানুয়ারি যে জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, গেন্ডারিয়ার সেই জায়গাটি জনবহুল। আশপাশে আবাসিক ভবন, কমপক্ষে তিনটি বিউটি পার্লার, ফাস্ট ফুডের দোকানসহ কয়েকটি বিপণি বিতানও রয়েছে। কিন্তু কেউ তার সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি। সে ওই এলাকার বাসিন্দা কি না, কারও বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত কি না, কোন কিছুই বলতে পারেনি এলাকার লোকজন। তবে ঘটনার দিন সকালে পথচারীসহ অনেকেই তাকে দেখেছেন। কিন্তু কেউই তাকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে আসেনি বরং ভেবেছে কোন পথশিশু হয়তোবা রাস্তায় ঘুমিয়ে আছে।
×