ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;দশম সাক্ষী প্রকাশ চন্দ্র বর্মণের জবানবন্দী

রাজাকাররা আমার বাবাকে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

রাজাকাররা আমার বাবাকে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ জামায়াতের সাবেক এমপি আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষী প্রকাশ চন্দ্র বর্মণ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে বলেছেন, রাজাকাররা আমার বাবা গনেশ চন্দ্র বর্মণকে দাড়িয়াপুর ব্রিজ থেকে ঘাঘট নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য কাল মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে শেরপুরের নকলার রাজাকার আমিনুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৬ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীকে সাক্ষ্য দানে সহায়তা করেন প্রসি্িকউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট গাজী তামিম। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম শ্রী প্রকাশ চন্দ্র বর্মণ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম: মৌজা মালিবাড়ি, থানা ও জেলা: গাইবান্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৩ বছর। আমি বর্তমানে কৃষিকাজ করি। ১৯৭১ সালে ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার দিকে আসামি রাজাকার আবু সালেহ মোঃ আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, রাজাকার আসামি মোঃ রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, রাজাকার আসামি মোঃ আব্দুল লতিফ, রাজাকার আসামি নাজমুল হুদা ও রাজাকার আসামি মোঃ আব্দুল রহিম মিয়াসহ ১৫/১৬ জন রাজাকার আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমার বাবা গনেশ চন্দ্র বর্মণকে আমাদের বাড়ি থেকে আটক করে। এরপর আমার বাবাকে রাজাকাররা বেঁধে মারপিট করে। এ সময় আমাদের প্রতিবেশী মকবুল হোসেন, মোহাম্মদ আলী ও মনসুর আটককৃত গনেশকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলে আসামি আবু সালেহ মোঃ আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ ও আসামি মোঃ আব্দুল লতিফ ঐ তিনজনকেও মারপিট করে। আসামিরা আমার বাবাসহ ঐ তিনজনকে দাড়িয়াপুর ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি আমার বাবাকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। নকলার রাজাকার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেরপুরের নকলা থানার রাজাকার এসএম আমিনুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধে আগামী ১৬ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে প্রসিকিউশন। সোমবার এই মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনালে তিন মাসের সময় আবেদন করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। গত ২২ আগস্ট এসএম আমিনুজ্জামান ফারুককে নকলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এসএম আমিনুজ্জামান ফারুক নকলা হাজী জাল মামুদ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক (সাময়িকভাবে বরখাস্ত)। তার বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জানা যায়, নকলা বাজারদি এলাকার সৈয়দ আলম মঞ্জু তার চাচা সৈয়দ শাহজাহান আলীকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৩ এপ্রিল নকলা থানায় প্রাথমিক অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় নামাজ আদয়ের পর সৈয়দ শাহজাহান আলীকে নকলা ধানহাটি বাজার মসজিদ থেকে এসএম আমিনুজ্জামান ফারুক ও তার ৫ সহযোগী আটক করে। শাহজাহান আলীকে নেয়া হয় নকলা পাইলট হাইস্কুলে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে। সেখানে তার শরীরের কাপড়, মাথার পাগড়ি খুলে মুখের ভেতর গুঁজে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকাররা।
×