ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উখিয়ার ১৩ রাজাকার পাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি!

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

উখিয়ার ১৩ রাজাকার পাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি!

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ সরকারের চলমান মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির অস্বচ্ছতার সুযোগে উখিয়ায় ১৩ জন অভিযুক্ত রাজাকার বাছাইয়ে পার পেয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে বরং বিরোধিতাকারী আরও অন্তত ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উখিয়ায় তালিকাভুক্ত মানবতাবিরোধী অপরাধী রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির লোকজনও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। গত তিন দিন ধরে ব্যাপক আপত্তি, অভিযোগ ও হট্টগোলের মধ্য দিয়ে বিতর্কিতভাবে উখিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উখিয়ার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া চৌধুরী, শহীদ পরিবারের সদস্য হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা বিডিআরের ল্যান্স নায়েক (অব) আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ প্রকৃত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানকার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ব্যাপক অস্বচ্ছ, ত্রুটিপূর্ণ ও রাষ্ট্রের নীতিপরিপন্থী। ২০১১ সালে উখিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড প্রণীত তালিকায় ৭নং ক্রমিকধারী আলী আকবর বাঙ্গালী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে এখানে যাচাই-বাছাই কমিটির একজন সদস্য। উখিয়া থানা শান্তি কমিটির ১৯নং তালিকাভুক্ত মৌলবি আবদুল জব্বারের দুই ছেলে কেফায়েত উল্লাহ ও রাহমহ উল্লাহ মুক্তিযোদ্ধা। রতœাপালং ইউনিয়নের রাজাকার তালিকায় ১২নং রাজাকার সদস্য কেফায়েত উল্লাহ। হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রাজাকার তালিকার ২৪নং সদস্য জাফর আলম ও মফিজুর রহমান। তৎকালীন মুসলিম পরিবারের সদস্য ১৯৭১ সালে এলাকার বাইরে চট্টগ্রামের ওয়াজেদিয়ায় অবস্থান করত এসএম ইসহাক চৌধুরী, উখিয়া থানা শান্তি কমিটির সভাপতির আপন ভাতিজা গিয়াস উদ্দিন, ১৯৭১ সালের ৬-৭ বছর বয়সের এবং ১৯৭৯ সালে নবম শ্রেণীর ছাত্র রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় জনৈক প্রভাবশালী আলবদর নেতার প্রতিবেশী হিসেবে তার আশ্রয়ে থাকা ধনঞ্জয় ঘোষ, ১৯৭১ সালে উখিয়া সদরে শান্তি কমিটির নেতার ছেলেদের শিক্ষক হিসেবে নিরাপদে থাকা ও জুলাই মাসের দিকে বার্মা পালিয়ে গিয়ে দেশ স্বাধীনের পর নিরাপদে দেশে ফিরে আসা মধুসুদন দে’রাসহ মুক্তিযুদ্ধে না গিয়েও অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে বীরদর্পে সুবিধা ভোগ করছে। এছাড়াও ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের অনুগত বন কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী আব্দুল মাবুদসহ আরও ১৫-২০ জন মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নতুনভাবে যাচাই-বাছাইয়ে পার পেয়ে গেছে। তার সহোদর মোহাম্মদ ইসমাঈল রাজাপালং ইউনিয়নের রাজাকার তালিকায় ১১নং সদস্য। উখিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, যাচাই-বাছাইকালে উপস্থিত থেকে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ব্যাপক আপত্তি ও অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ অভিযুক্ত বিতর্কিত লোকজনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পার পেয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে এক্ষেত্রে জনৈক রুহুল আমিনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কমিটি নানাভাবে হেয় করতেও লক্ষ্য করা গেছে। হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান ও শহীদ পরিবারের সদস্য অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, উখিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে অসংখ্য অভিযোগ থাকার পরও কথিত যাচাই-বাছাই কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, লোক দেখানো ও নাটকীয়ভাবে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্ত রাজাকারসহ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে বাদ দেয়া না হলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন হিসেবে আমরা আদালতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব। এ ব্যাপারে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি এমএ রাজ্জাক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্নের পথে বলে জানান।
×