ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুঠিয়ার রাজাকার মুসা কারাগারে, আজ রিমান্ড চাইবে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

পুঠিয়ার রাজাকার মুসা কারাগারে, আজ রিমান্ড চাইবে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পুঠিয়ার কুখ্যাত রাজাকার আবদুস সামাদ ওরফে ফিরোজ খাঁ ওরফে মুসাকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একটি বিস্ফোরণ মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুঠিয়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানিয়েছেন, মুসাকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার সকালে আদালতে চালান দেয়া হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মুসাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আজ মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে রবিবার রাত ৮টার দিকে পুঠিয়া বাজার থেকে পুলিশ মুসাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতারিবোধী অপরাধের অভিযোগও রয়েছে। এর আগে গত ৯ ও ১০ জানুয়ারি তার অপরাধ তদন্তে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পুঠিয়ার বাঁশবাড়িয়া, পশ্চিমভাগ এবং গোটিয়া গ্রামে আদিবাসী ও বাঙালীদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়। মুসার হাতে নিহত পশ্চিমভাগ গ্রামের শহিদ আবদুস সামাদের স্ত্রী রাফিয়া বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ তদন্তে আসেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিদর্শক ফারুক হোসেন। এর আগে গত বছরের ২৭ জুলাই রাজশাহী সার্কিট হাউসে তিনি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পুঠিয়া থানার ওসি আরও বলেন, জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার তারাস গ্রামে বোমা হামলার ঘটনার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে , ১৯৬৪ সালে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আদিবাসীদের সঙ্গে জমি বিনিময় করে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার ইসলামপুর গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে মুসা ও তার নিকট আত্মীয়দের নিয়ে পুঠিয়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসার বয়স ছিল ২০ থেকে ২২ বছর। ওই বয়সেই মুসা পাকিস্তানের পক্ষে এলাকার যুবকদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে এ দল এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালায়। একাত্তরের ১২ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী পুঠিয়া আক্রমণ করে মানুষ হত্যা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে মুসা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। সে ১৯ এপ্রিল ৩০-৪০ জন হানাদার বাহিনী নিয়ে যায় বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। সেখান থেকে তারা ২১ জনকে আটক করে। তাদের নিয়ে রাখা হয় গোটিয়া গ্রামের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের বাড়িতে। সেখানে দিনভর নির্যাতন করে ১৭ জনকে ছেড়ে দেয়া হলেও চার জনকে হত্যা করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে একজন ছিলেন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নূরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি বাঁশবাড়িয়া বাজারে পল্লী চিকিৎসক। নূরুল ইসলাম জানান, তার সঙ্গে বাবা ইসমাইল হোসেন, বড় ভাই আকরাম আলীকেও আটক করা হয়েছিল। সারাদিন নির্যাতন করে রাত ১০টায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় চার জনকে। তিনি আরও বলেন, একাত্তর সালে বাঙালী ও আদিবাসী হত্যা ও লুটপাটের পর দেশ স্বাধীন হলে মুসা রাজাকার ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে সে দেশে ফিরে এসে আদিবাসী পল্লীর ১৫২ বিঘা জমি দখল করে নেয়। এরপর দিনে দিনে এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেছে।
×