ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সমঝোতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সমঝোতা

এম শাহজাহান ॥ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চলবে সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৫০টি বিষয়ে সমঝোতা (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডার স্টান্ডিং-এমওইউ) চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করে এনেছে। আগামী মার্চ মাসের সুবিধাজনক সময়ে সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষর করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক ও প্রকল্প একসঙ্গে চলতে গিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হচ্ছিল, আশা করা হচ্ছে, সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে তার অবসান হবে। আগামী ২০২০ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ পুরোপুরি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। ওই সময়ের পর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অফিস ব্যবহার করবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। প্রকল্পের টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার, টেলিফোনসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। নিয়োগকৃত জনবলের দক্ষতা অনুযায়ী প্রকল্প ও ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকল্পের স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন। তবে ব্যাংক যদি মনে করে তাদের বিশেষ ইনসেনটিভ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে সেক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে দিতে হবে। আপাতত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকল্প হতে বেতন-ভাতা পাবেন। ইতোমধ্যে ছয় মাসের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়েছে। হিসাব সংরক্ষণে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। দুটি সংস্থারই মূল লক্ষ্য হবে দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এছাড়া প্রকল্প ও ব্যাংকিং কার্যক্রম একসঙ্গে চলতে যাতে কোন সমস্যা না হয় এরকম বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির বিষয় চূড়ান্ত করে আনা হয়েছে। জানা গেছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প কখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে একীভূত হবে, সেই সময় নির্ধারণ করবে সরকার। গত বছরের ৩০ জুনের পরে প্রকল্পটি বিলুপ্ত হয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতের কথা থাকলেও আইন সংশোধন করে সময়ের সেই বাধা তুলে দেয়ার প্রস্তাব ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সম্প্রতি মন্ত্রিসভা বৈঠকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সংশোধন) আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সম্পর্ক রয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার থেকেই ২০১৪ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের ৩৯ ধারায় বলা ছিল, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্ত প্রকল্পের সব সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, অর্থ, কর্মসূচী এবং দায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হাতে চলে যাবে। এদিকে, এই আইন সংশোধন না করেই গত ২৫ অক্টোবর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর বাড়িয়ে আট হাজার ১০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। শফিউল আলম জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পরে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি বিলুপ্ত হয়ে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আসলে সে প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় সময়ের বাধা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার যখন সময় নির্ধারণ করবে তখন প্রকল্পগুলো ব্যাংকে চলে আসবে। এদিকে, সমন্বিত গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কার্যাবলীর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। গত ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৪ সালে শেষের কথা থাকলেও পরে ব্যয় ১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকায় উন্নীত করে। এদিকে, জটিলতা নিরসসে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন ২০১৪, এর সংশোধন করাসহ তা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলুল হক। এই কমিটিই এখন সমঝোতা চুক্তির বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে এনেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক একসঙ্গে চলতে যাতে কোন সমস্যা তৈরি না হয় সেজন্য সমঝোতা চুক্তি করা হবে। এ সংক্রান্ত কমিটি তাদের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। শীঘ্রই চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন। আগামী চার বছরের মধ্যে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে বলে আশা করছি। ওই সময় বা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ। আর এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই প্রকল্পটি ২০২০ সাল পর্যন্ত চালিয়ে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই সময় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ১২ হাজার কোটি টাকার মূলধন যোগান দিবে। এদেশের গরিব মানুষের টাকায় এই মূলধন যোগাড় করার কাজ শুরু করেছে প্রকল্প। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আরও ৩৬ লাখ পরিবারকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের আওতায় গত বছরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪০ হাজার ২১৪টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠিত হয়েছে। সমিতিতে প্রায় ২২ লাখ সদস্য তথা পরিবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত সদস্যদের নিজস্ব সঞ্চয় ৯৭০ কোটি ২২ লাখ এবং বিপরীতে সরকার প্রদত্ত বোনাস ও আবর্তক তহবিল ১ হাজার ৯৫৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সার্ভিস চার্জ, ব্যাংক সুদ ও সম্পদের অর্থ আদায়সহ প্রকল্পের আওতায় গঠিত সমিতির মোট তহবিলের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৫২টি ৯৯ লাখ টাকা।
×