ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারছেন না

গলদার দরপতনে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষীরা দিশেহারা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

গলদার দরপতনে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষীরা দিশেহারা

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় চিংড়ি চাষে ‘ছোট কুয়েত’ খ্যাত বাগেরহাটের চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট উপজেলার কয়েক হাজার চিংড়ি চাষী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অধিক মূল্যে মাছের পোনা ও খাবার ক্রয় করে চিংড়ি বিক্রয়ের সময় দাম কম থাকায় চাষীরা তাদের খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় ঋণগ্রস্ত চিংড়ি চাষীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। হতাশ হাজার হাজার চাষী গলদা চিংড়ি চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। সরেজমিনে চিতলমারী সদর বাজার, বাখেরগঞ্জ বাজার, ডুমুরিয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মৎস্য আড়ত, চিংড়ির ডিপো ঘুরে দেখা গেছে, ছোট আকারের গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা, মাঝারি ৬শ’ টাকা ও বড় আকারের চিংড়ি প্রতি কেজি ৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন খোলা বাজারেও কম মূল্যে প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে চিংড়ির দাম কম থাকায় দেনার দায়ে বাধ্য হয়ে চাষীরা নাম মাত্র মূল্য চিংড়ি বিক্রি করছেন। মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চিতলমারী সদর, বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চরবানিয়ারীসহ ৭ ইউনিয়নে চলতি বছরে ৬ হাজার ৮শ’ পনের হেক্টর মৎস্য ঘেরে সাড়ে ৭ হাজার মৎস্য চাষী চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করেন। চিংড়ি চাষের সঙ্গে চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলার প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে প্রায় দুই লাখ মানুষ জড়িত। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে প্রায় ৭ হাজার টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ পরিবার মৎস্য ঘেরে চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশীল। গত বছর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যা ও ঝড়ে এলাকায় প্রায় শতভাগ চিংড়ি চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আগেই গলদা চিংড়ির বড় ধরনের দরপতনে এলাকার হাজার হাজার চিংড়ি চাষীর মরণদশা দেখা দিয়েছে। এখানকার অধিকাংশ চাষী বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদে কারবারিদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে বেশি দামে মাছের পোনা ও মাছের ফিড ক্রয় করে চাষাবাদে ব্যয় করেছেন। এ পরিস্থিতিতে চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় তারা খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারছেন না। দেনার দায়ে জর্জরিত এসব চাষীরা ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোন পথ দেখছেন না। চরবানিয়ারী ইউনিয়নের শ্যামপাড়া গ্রামের চিংড়ি চাষী দিজেন গাইন, স্বপন ম-ল, সুমন মীর, সদর ইউনিয়নের রায় গ্রামের বিনয় সিংহ, পাড়ডুমুরিয়া গ্রামের লতিফ শেখ, কবির শেখ, হেমায়েত সরদারসহ অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সুদে কারবারিদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে তারা চিংড়ির চাষ করেছেন। কিন্তু চিংড়ির দাম কম থাকায় তারা উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারছে না। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কিছু অসাধু চাষী গলদা চিংড়ির খাবার হিসেবে পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করায় সম্প্রতি গলদা চিংড়িতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। ফলে আমদানিকারক দেশ দুটি চালান মাছ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কারণে মাছের দরপতন ঘটে। তাছাড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেও মাছের বাজার দর কম রয়েছে।
×