ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরাম ফর আরএমজি মনে করছে যে, ২০২১ সাল নাগাদ পোশাক রফতানি ছাড়িয়ে যাবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এটি একটি আশাব্যঞ্জক খবর নিঃসন্দেহে। তবে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো নিরাপত্তা। রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশন্সসহ আরও দু’-একটি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা- ও ভবন ধসের পর পোশাক শিল্পের ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের। অতঃপর পোশাক শিল্পের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয় বিদেশী ক্রেতাজোট এ্যাকর্ড এ্যান্ড এ্যালায়েন্স, যাদের কার্যকাল ২০১৮ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এও মনে রাখতে হবে, প্রধানত নিরাপত্তাহীনতার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা স্থগিতসহ রফতানিতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সমস্যা। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠন করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরাম। পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, সময়মতো বেতন-বোনাস, ওভারটাইম প্রদান, সর্বোপরি বিদ্যুত-গ্যাসসহ অগ্নিকা- বা অন্যবিধ ঝুঁকি কমানো ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত দেখভাল ও তদারকি করে থাকে এই ফোরাম। ইদানীং ‘গ্রীন গার্মেন্টস’ কর্মসূচীও জনপ্রিয়তা পেয়েছে, মূলত যা পরিবেশবান্ধব বলেই স্বীকৃতি পেয়েছে দেশে-বিদেশে। দেশে বর্তমানে ৫ হাজার ৬০০টি পোশাক কারখানা রয়েছে। কলকারখানা অধিদফতর এবং এ্যাকর্ড এ্যান্ড এ্যালায়েন্সের দেখভাল-তদারকির পরও এখন পর্যন্ত প্রায় ৫২ ভাগ কারখানায় শতভাগ নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যায়নি। অন্তত ৪০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় অদ্যাবধি গড়ে ওঠেনি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। ২৫ শতাংশ কারখানায় নেই নিরাপদ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা অথচ দুর্ঘটনা ও অগ্নিকা-ের অন্যতম কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ। পর্যায়ক্রমে হলেও এসব নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরাম। এর আওতায় গার্মেন্টস কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে গঠন করা হচ্ছে জেলা ব্যবস্থাপনা কমিটি। যেসব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় পোশাক কারখানা রয়েছে অথবা হতে যাচ্ছে, সে সবে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করতে এই কমিটি, যার নেতৃত্বে থাকবেন জেলা প্রশাসক। অবকাঠামোগত নিরাপত্তার বাইরেও বাংলাদেশের পোশাক খাতের অন্যতম সমস্যা শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা। সময় সময় প্রধানত এ নিয়েই অশান্ত হয়ে ওঠে পোশাক শিল্প। এও সত্য যে, দেশে পোশাক শ্রমিকদের অধিকাংশ নারী এবং তাদের মজুরি প্রতিবেশী ভারত, চীন, ভিয়েতনাম থেকে কম। তবু বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় গত কয় বছরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বেড়েছে। পোশাক শিল্প খাত শনৈঃ শনৈঃ লাভের মুখ দেখছে। তা হলেও কিছু কারখানায় নিয়মিত বেতন-ভাতা-বোনাস দেয়া হয় না। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলো। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্প পুলিশ গঠন করা হলেও তাদের তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক আন্তরিক ও পারস্পরিক নির্ভরশীল হলে। তাহলে বাইরের কোন শক্তি, সংগঠন কিংবা ইন্ধনের দরকার পড়ে না। সরকারী ফোরামের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়েও গঠিত হতে পারে এই জাতীয় ফোরাম, যাতে মালিক-শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তারাই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করে নিশ্চিত করবেন আর্থিক খাতসহ পোশাক শিল্পের সার্বিক নিরাপত্তা। সর্বোপরি শুধু গার্মেন্টস শিল্প নয়, বরং রফতানিমুখী অন্যান্য শিল্পেও সোশ্যাল কমপ্লায়েন্সের বাস্তবায়িত হওয়া আবশ্যক।
×