ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য

ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১২টি প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। এর মধ্যে বেশিরভাগই অবকাঠামো সমস্যা। আশার কথা হলো বাংলাদেশ সরকার এসব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগও নিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণে চারটি বাধার কথা বলা হয়েছিল সিপিডির একটি সেমিনারে। তাতে কথিত বাধাগুলো হলো অবকাঠামো দুর্বলতা, শুল্ক ও বন্দরসংক্রান্ত সুবিধাসমূহ, অশুল্ক বাধা এবং ঝামেলাপূর্ণ রফতানি প্রক্রিয়া। আলোচকরা দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে অশুল্ক বাধা ও আমলাতান্ত্রিক সমস্যার কথাটিও তুলেছিলেন। বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের ওপর অশুল্ক বাধা কমিয়ে আনার মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। নতুন সম্ভাবনার কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও ভারত। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ ভারতের সঙ্গেই হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের ওপর। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব। দরকার শুধু সদিচ্ছা ও সমতাভিত্তিক বাণিজ্যনীতি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নৌযোগাযোগ স্থাপিত হলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, কোন সন্দেহ নেই। সম্প্রতি বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক (বাজার দখলে কম দামে পণ্য ছাড়ার শাস্তিস্বরূপ শুল্ক) আরোপের ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানিকারকরা। বাংলাদেশ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের পাটপণ্য ভারতে রফতানি করেছে। ভারতে বাংলাদেশের মোট রফতানির ২০ শতাংশেরও বেশি হলো পাট ও পাটজাতপণ্য। এ অবস্থায় ওই শুল্ক আরোপ ভারতে বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি ডলারের পাটপণ্য রফতানি বাধাগ্রস্ত করবে এবং প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশী পাটের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা আশা করেছিলাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ওই শুল্ক আরোপ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অবশেষে শুক্রবার ভারতের ৬৮তম প্রজাতন্ত্র দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ওই শুল্ককর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দ্রুত পাটপণ্য রফতানির ওপর এ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপের বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নিন।’ এটা সহজেই বোধগম্য যে ভারতের বিশাল বাজারে বাংলাদেশের পাটপণ্য অবাধে প্রবেশ করলেও তা শতকরা হিসাবে খুব সামান্যই হবে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে রয়েছে ভারতের নানা পণ্যের বিরাট বাজার। তাই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক স্বার্থেই ভারতের সমীচীন হবে কথিত শুল্কারোপ প্রত্যাহার করে নেয়া। স্মরণযোগ্য দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভারত থেকেই প্রথম ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছিলেন। দেশের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা দরকার। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার এখনই সময়। এ জন্য বাংলাদেশে আরও ভারতীয় বিনিয়োগের প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ আশা করে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে ভারত অচিরেই উচ্চ শুল্ক প্রত্যাহার করবে।
×