ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরাফাত সানি গ্রেফতার, রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

আরাফাত সানি গ্রেফতার, রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কথিত স্ত্রী নাসরিন নামে এক তরুণীর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে একদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। রবিবার দুপুরে পুলিশ তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করলে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রবিবার সকালে মোহাম্মদপুর থানায় ওই তরুণীর মামলায় আরাফাত সানিকে আমিনবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বেলা তিনটার পর ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমারের আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়। আরাফাত সানির আইনজীবী রকিবুল ইসলাম রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। এদিকে রবিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, গত ৫ জানুয়ারি নাসরিন সুলতানা নামে এক তরুণী আরাফাত সানির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। নাসরিনের দাবি, সানির সঙ্গে তার বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি আরাফাত সানির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব সরকার জানান, মামলার পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে সানির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। এরপরই সকাল আটটার দিকে আমিনবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, ওই নারী অভিযোগ করেছেন সানির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তারা প্রেম করে বিয়েও করেছেন। তবে একপর্যায়ে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। নাসরিন জানান, সম্প্রতি সানি তাদের বিবাহিত জীবনের কিছু ব্যক্তিগত আপত্তিকর ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেন। আমরা তার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। সানির মোবাইল ফোন থেকেই ছবিগুলো প্রকাশ হয়েছে। বিয়ের কিছু কাগজপত্র ও ছবি জমা দিয়েছেন তরুণী। তরুণী নাসরিনের বাড়ি মোহাম্মদপুরের কাঁটাসুরে। বাবা একজন সিএনজি অটোচালক। তার আরও তিন বোন রয়েছে। এদিকে সকালে আরাফাত সানিকে গ্রেফতারের পর মোহাম্মদপুর থানায় ছুটে আসেন তার মা ও ভাই। সানির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন তার মা নার্গিস আক্তার। সানির ভাই ফয়সাল মোহাম্মদপুর থানার সামনে সাংবাদিকদের বলেন, সানি যখন মিরপুরে অনুশীলন করত তখন এই তরুণী তাকে অনুসরণ করত। এমনকি আমাদের বাসায় গিয়েও তার ভাল লাগার কথা জানায়। কিন্তু সানি তাকে পাত্তা না দেয়ায় সে এই কাজ করেছে। মা নার্গিস আক্তার দাবি করেন, তার ছেলে কোন অপরাধ করেনি। টাকার লোভে ওই মেয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ওই তরুণী সানির সঙ্গে বিয়ের দাবি করলেও কোন কাবিননামা দেখাতে পারেনি বলে দাবি করেন নার্গিস। সানির বিরুদ্ধে করা অভিযোগ খতিয়ে দেখার আগে নাসরিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখার দাবি জানান তিনি। এজাহারে যা বলা হয়েছে ॥ ওই তরুণীর বাসা মোহাম্মদপুরের কাঁটাসুরে। বন্ধুর মাধ্যমে তাদের মধ্যে মোবাইল ফোনের নম্বর আদান প্রদান হয়। সাত বছর আগে সানির সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেম হয়। ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পরিবারকে না জানিয়ে সানির সঙ্গে তিনি গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিয়ের পরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ বাড়িতে তুলে না নিয়ে আরাফাত সানি সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এজাহারে আরও বলা হয়, পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ থাকায় ওই তরুণী সানিকে বলেন, হয় তাকে তুলে নেয়া হোক, না হয় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হোক। এমনকি তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রস্তাব দিলেও সানি তাতে কান দেননি। এরপরই গত ১২ জুন রাত একটা ৩৫ মিনিটে সানি তার নাম ব্যবহার করে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে একটি ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলেন। ওই আইডি দিয়ে তরুণীর নিজস্ব এ্যাকাউন্টে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি ও একক ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে তাকে নানারকম হুমকি দিতে থাকেন। এরপর তার ফেসবুক আইডিতে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে তাকে আরও উত্ত্যক্ত করতে থাকেন সানি। তাকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই ইয়াহিয়া জানান, রবিবার সানিকে গ্রেফতারের পর ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম আদালতকে বলেন, আরাফাত সানির সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়েছিল। গত বছরের ১২ জুন আরাফাত সানি বাদীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে দুজনের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি এবং বাদীর একক আপত্তিকর ছবি পাঠান। পরে নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেন। গত বছরের ২৫ নবেম্বর ভোর চারটার দিকে আরাফাত আবার ফেসবুক মেসেঞ্জারে ওই নারীকে আপত্তিকর ছবি পাঠান। তিনি আরও ভয়াবহ অবস্থার জন্য ওই নারীকে অপেক্ষা করতে হবে বলে হুমকি দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জুয়েল আহমেদ বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। এই আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হওয়ার তথ্য প্রমাণ নেই। এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী বিয়ের একটি কাবিননামা আদালতে দেন। আদালত শুনানি শেষে সানিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ শুনানি করারও নির্দেশ দেন আদালত। এ সময় মামলার বাদী নাসরিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতীয় দলে বাঁহাতি স্পিনার সানির অভিষেক হয় ২০১৪ সালে। দেশের হয়ে সর্বশেষ তিনি খেলেছেন গতবছর টি২০ বিশ্বকাপে। তার আগে ২০১৫ সালের নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে দেশের হয়ে শেষ ওয়ানডে খেলেন। টি২০ বিশ্বকাপের সময় অবৈধ বোলিং এ্যাকশনের কারণে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আরাফাত সানিকেও নিষিদ্ধ করে আইসিসি। বোলিং এ্যাকশন সংশোধনের পর এখনও জাতীয় দলে ফেরা হয়নি সানির। গত বছরের শেষ দিকে রংপুর রাইডার্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়াম লীগে অংশ নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার দিনুকা হেতিয়ারাচ্চির পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি২০ তে শূন্য রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি আলোচনাতেও এসেছিলেন। আরাফাত সানির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস বলেন, ঘটনাটা আমরা শুনেছি। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তবে যে ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন, এটা সম্পূর্ণ তার পারিবারিক বিষয়। এখানে আমাদের কিছুই করার বা বলার নেই।
×