ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শুরু পুলিশ সপ্তাহ

‘জঙ্গী মাদকের প্রতিকার বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

 ‘জঙ্গী মাদকের প্রতিকার বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’

আজাদ সুলায়মান ॥ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে আজ থেকে পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭ শুরু হচ্ছে। এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য-‘জঙ্গী মাদকের প্রতিকার, বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপ্তাহের প্রথম দিন আজ সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ণাঢ্য পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন। তিনি সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১০টি কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহীদলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন। জানা গেছে, এবারের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০১৬ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৬ জন পুলিশ সদস্যকে “বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ৪১ জনকে “রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)” এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৪ জন পুলিশ সদস্যকে “বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা” এবং ৪১ জনকে “রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা” প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী তাদের পদক পরিয়ে দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সিআইডি’র ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার, সাইবার ট্রেনিং সেন্টার এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য ‘রাজারবাগ-৭১’ উদ্বোধন করবেন। তিনি পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর স্টল পরিদর্শন করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশ নেবেন। পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে এবারও একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা অধিনায়ক হিসেবে প্যারেডে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি হলেন চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে এ এক নতুন মাইলফলক। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন-দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তাসহ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে গুরুত্ব¡পূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ‘শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা-প্রগতি’ এ মন্ত্রে দীক্ষিত দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্যগণ তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আরও নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক হবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেছেন, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সকল প্রয়োজন ও সঙ্কটকালে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সাফল্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিম-লে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সরকারী-বেসরকারী টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেলসমূহ পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পুলিশ সপ্তাহের অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,উর্ধতন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, পুরস্কার বিতরণ (আইজি’জ ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড,অস্ত্র, মাদক উদ্ধার প্রভৃতি), অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ইত্যাদি। আগামী শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে পুলিশ সপ্তাহের নানা আয়োজনের। পুলিশ সপ্তাহে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়। এদিকে এবারের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে মাঠ পর্যায় থেকে বেশ কিছু মৌলিক দাবি দাওয়া তুলে ধরা হবে। তৃণমূল পুলিশের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমানে দেশীয় পুলিশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট আবাসন ও প্রশিক্ষণ। উন্নত দেশের তুলনায় প্রশিক্ষণের অবস্থা খুবই স্বল্প। এ সম্পর্কে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের একজন সদস্য যেখানে প্রশিক্ষণের সময় বছরের কমপক্ষে ৩৫ হাজার রাউন্ড গুলি ব্যবহার করে,সেখানে বাংলাদেশে ব্যয় করা হয় মাত্র ৩৫ রাউন্ড। প্রশিক্ষণে আধুনিক বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে এই একটি পরিসংখ্যান থেকে অনুধাবণ করা যায়। একই চিত্র আবাসন, লজিস্টিক ও বেতন-ভাতাদির ক্ষেত্রেও। এত সীমাবদ্ধতার মাঝেও পুলিশ ১৬ কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সচেষ্ট। এ্টাই পুলিশের চ্যালেঞ্জ-এটাই পুিলশের গর্ব।
×