ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অমীমাংসিত কিছু ইস্যুতে আলোচনা চাইছে ঢাকা

ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি বৃদ্ধির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি বৃদ্ধির উদ্যোগ

তৌহিদুর রহমান ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকা-ওয়াশিংটন জোরালো সম্পর্ক গড়তে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কিছু অমীমাংসিত ইস্যুতে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে চায় ঢাকা। এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক গড়তে চায় ঢাকা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নতুন করে আলোচন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) নিয়ে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা এখনও পায়নি। সে কারণে এই ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করবে ঢাকা। এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি বাতিল করবে। এই চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত নীতি অনুযায়ী প্রশাসনে খুব একটা পরিবর্তন হয় না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিভিন্ন নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, সেটাই পর্যবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ। ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ বিবেচনায় নিয়ে একযোগে কাজ করবে ঢাকা-ওয়াশিংটন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গত ১৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে এক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। সে সময় তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, সে বিষয়ে আভাস দিয়েছেন। ওই বৈঠকে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে আরও জোরালো সম্পর্ক গড়ার বিষয়েও আলোচনা করেন তারা। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ঢাকা-ওয়াশিংটন একযোগে কাজ করছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্পর্ক দিনে দিনে বাড়ছে। সে কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চায় ঢাকা। এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের ইতিবাচক সকল উদ্যোগ বাস্তবায়নেও পাশে থাকতে চায় বাংলাদেশ। সে কারণে ঢাকা ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অবশ্য কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির খুব একটা হেরফের হবে না। কেননা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি রাতারাতি বদলে যায় না। এতে সময় লাগে। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এমন কোন পক্ষ নয় যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক স্বার্থ জড়িত। যদিও ভৌগোলিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এছাড়া ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের বিচারে বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন সূচনার সুযোগ হয়েছে। এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরী। সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগেই ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য রেখেছিলেন। এখন ক্ষমতায় আসার পরে তিনি চাইলে তার নির্বাহী আদেশে অভিবাসন নীতি বদলে ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা জটিলতায় পড়তে পারেন। ফলে অভিবাসীরা বিপাকেও পড়তে পারেন। তবে ট্রাম্প সরকার অভিবাসনবিরোধী কোন পদক্ষেপ নেবে কিনা সেটা এখনও চূড়ান্ত নয়। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসী এবং মুসলিমদের তাড়ানোর বিষয়ে ট্রাম্প যেসব কথাবার্তা বলেছেন সেটা করার মতো একক ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আসলে নেই। সেখানে কংগ্রেস এবং জুডিসিয়াল সিস্টেম অনেক শক্তিশালী। তাই ট্রাম্পের পক্ষে ‘যা খুশি তাই করা’ কখনই সম্ভব হবে না। তবে এসব সত্ত্বেও ট্রাম্পের বিজয়ে প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই বিশ্ব নেতাদের মধ্যে প্রথম যারা ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম ট্রাম্পকে অভিনন্দন বার্তা পাঠায়। সেই অভিনন্দন বার্তায় ট্রাম্পের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা করেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগের দিন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের কোন পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
×