ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাইডাসের বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধনে অর্থমন্ত্রী

আগামী তিন বছরের মধ্যে শক্তিশালী পুঁজিবাজার হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

আগামী তিন বছরের মধ্যে শক্তিশালী পুঁজিবাজার হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে ২০২০ সালের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যেখান থেকে আমরা বিভিন্ন বিনিয়োগে আগ্রহ নিতে পারব। রবিবার ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে মাইডাস ইনভেস্টমেন্টের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের যাত্রা শুরু উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ১৬ বছর যাবত মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে পুঁজিবাজারে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার ব্রত নিয়েই মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড গড়ে তোলা হয়। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশের পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্য নিয়েই এই কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে যা পুঁজিবাজার উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড এবং মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রোকেয়া আফজাল রহমান। অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেন। মুহিত বলেন, গত ২০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে হয়নি, এরকম রেকর্ড খুব কম দেশের আছে। আমার বিশ্বাস, আমরা যেভাবে চলছি, আরও যদি কিছু পরিবর্তন আমরা করতে পারি, তাহলে এই দশকেই, মানে ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের অনেক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমি বিশ্বাস করি, ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের এখানে একটা শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে। মাত্র তিন বছর বাকি। এই তিন বছরের মধ্যেই হবে বলে আমরা বিশ্বাস। তিনি বলেন, আশির দশকে এনজিও হিসেবে কাজ শুরু করা মাইডাস এখন নিজের টাকায় চলছে। মাইডাস চলত বিদেশী সহযোগিতার টাকায়। এক সময় এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা ঘোষণা দিয়েছিল- তারা নিজের টাকাতেই চলবেন। নিজের টাকায় চলার ঘোষণা অনেকেই দেয়। তবে সেটা বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন। মাইডাস সেটা করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনই আমেরিকার ঝুড়ি ছিল না। আমেরিকা কখনই বাংলাদেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়নি। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে একটি দেশ হচ্ছে আমেরিকা। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেননি। বলেছিলেন দেশটির ডেপুটি সেক্রেটারি অ্যালেক্সিস জনসন। জনসন কিসিঞ্জারকে বলেছিলেন যে বাংলাদেশ যেভাবে এগোচ্ছে, সেটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে। তখন কিসিঞ্জার বলেন যে, হলেও সেটি আমাদের ঝুড়ি হবে না। মুহিত বলেন, স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে সম্পর্ক ছিল, তা পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সম্পর্কের অর্ধেক। পাকিস্তানই বরং তাদের ঝুড়ি ছিল। কারণ, পাকিস্তানকে তাদের প্রচুর খাদ্য সহায়তা দিতে হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের খাদ্য সমস্যা ছিল। ১ কোটি ১০ লাখ খাদ্য উৎপাদন হতো। প্রয়োজন ছিল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। এখন আমরা ৩ কোটি ৮০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করি। যদিও খাদ্যশস্যের জমি অনেক কমে গেছে। তারপরও আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে প্রমাণ করে দিয়েছি। অনুষ্ঠানে মাইডাস ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান রোকিয়া আফজাল রহমান তলাবিহীন ঝুড়ি বলার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। রোকেয়া বলেন, ১৯৮২ সালে উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ একদল মানুষ মাইডাস প্রতিষ্ঠা করে। তখন স্যামসন চৌধুরী, আমিরুল ইসলামরা ছিলেন। মানুষের কল্যাণ করার উদ্দেশ্য সেই সময় থেকেই আমাদের ছিল। এসএমই খাতে আমরা ভাল করেছি। নব্বইয়ের দশকে আমরা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়েছি। তখন নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হতো না। এটা করে আমরা বেশ ভাল ফল পেয়েছি। নতুন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্য মূল প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদেও আছেন বলে জানান রোকেয়া। তিনি বলেন, মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেন করা কোম্পানিগুলোর এ্যাডভাইজারি ও ইস্যু ব্যবস্থাপনা করবে। আশির দশকে মাইডাস এসএমই ঋণ দেয়া শুরু করেছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তার আগে বাংলাদেশে এ ধরনের ঋণ দেয়া হতো না। আর এখন দোকানদার থেকে শিল্পপতি, সেলসম্যানের চাকরি করা নারী থেকে সফল উদ্যোক্তা- এ ধরনের বহু সফলতার গল্প মাইডাসের ঝুলিতে রয়েছে। মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক-উল-আজম অনুষ্ঠানে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুঁজিবাজারে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের ভূমিকা খুবই সীমিত। এ কারণেই নতুন প্রতিষ্ঠান খুলেছেন তারা। তিনি বলেন, মাইডাস ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যাতে সর্বশান্ত না হন- আমরা সেই কাজ করব, পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিগুলোর অর্থ সংগ্রহের জড়তা কাটাতে কাজ করব। শেয়ারের বিপরীতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেব। ভবিষ্যতে ব্রোকার ও এ্যাসেট ব্যবস্থাপনা কোম্পানি করারও ইচ্ছার কথা জানান মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
×