রহমান শোয়েব, চবি ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহাত হওয়া ১২শ’ কোটি টাকার ভূমি ফিরে পেতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পর্যায়ে পূর্ব দিকের সীমানা নির্ধারণ শেষে চলছে পিলার ও গ্রিল স্থাপনের কাজ। গ্রিল স্থাপনের পর এখানে বেতের গাছ লাগানো হবে। সীমানা প্রাচীরকে একটি প্রাকৃতিক রূপ দিতেই এমনটা করা হবে। পূর্বের পিলার ও গ্রিল স্থাপনের পাশাপাশি উত্তর দিকে নির্ধারণ করা হচ্ছে সীমানা।
উত্তরে সীমানা নির্ধারণের কাজ সøুইসগেট থেকে শুরু হয়েছে গত ১ জানুয়ারি। চলতি মাসের মধ্যেই উত্তরের সীমানা নির্ধারণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে আমাদের কাজ চলছে। পূর্বদিকের সীমানা নির্ধারণ সম্পন্নের পর এখন চলছে পিলার ও গ্রিল স্থাপনের কাজ। অন্যদিকে উত্তর দিকে সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। আশা করি চলতি মাসের মধ্যেই উত্তরের সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন হবে।
তবে সম্পূর্ণ সীমানা পরিমাপের পর আমরা বলতে পারব আমরা কতটুকু ভূমি উদ্ধার করতে পারলাম। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি সুরক্ষায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হলেও বাদ সেধেছে কিছু অসাধু লোকজন। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি সেই চক্রে যোগ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য এখন যথাসময়ে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে সুরক্ষিত করা। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে কাজ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সøুইসগেট থেকে দক্ষিণ আবাসিক এলাকার নীপবন স্কুল পর্যন্ত পিলার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সøুইসগেট থেকে সোহরাওয়ার্দী হলসংলগ্ন সীমানা এলাকায় লোহার গ্রিল স্থাপন শেষে এখন রং লাগানোর কাজ চলছে। তবে কিছু কিছু স্থানে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। নীপবন স্কুল থেকে সর্বদক্ষিণে ফরেস্ট্রি এলাকা পর্যন্ত এখন পিলার স্থাপনের কাজ চলছে বেশ দ্রুত গতিতেই। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার ফতেপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে চবি। ’৬৬ সালে ১ হাজার ৭৫৩ দশমিক ৮৮ একর আয়তনের টিলা ও সমতল ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ আলীর আমলে ভূমি পরিমাপ করা হয়। এরপর কাজটি কষ্টসাধ্য ও জটিল অজুহাতে আর কোন উপাচার্যই ভূমি পরিমাপের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। তবে মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু পিলার বসানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু স্থায়ী সীমানা প্রাচীর না থাকার সুযোগটিকে কাজে লাগায় অবৈধ দখলদাররা। তাদের আগ্রাসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন কমে দাঁড়ায় প্রায় ১২শ’ একরে। বেহাত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা মূল্যের ভূমি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থও হতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়কে সুরক্ষিত করতে প্রায় ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ।