ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদুল আলম তালুকদার

মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কিছু প্রস্তাব ॥ অভিমত

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কিছু প্রস্তাব ॥ অভিমত

মুক্তিযোদ্ধারা আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সম্মান পেয়েছেন তার জন্য বর্তমান সরকারকে প্রশংসা করতে হয়। এর আগে আরও দুটি দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান দেখায়নি এবং কোন ধরনের সুযোগ সুবিধাও দেয়নি। উল্টো মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আজ লাঞ্ছনার পরিবর্তে যে রাষ্ট্রীয় সম্মান তা শুধু সরকার নয়, দেশ ও দেশের মানুষকে মর্যাদাশীল করে তুলেছে। বিদেশেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানিকে আরও গৌরবান্বিত করে তুলেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ গৌরব আমারও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ’৭১-এ পাকিস্তানীদের বিতাড়িত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। ৯ মাস যুদ্ধের পর পাকিস্তানী সেনা ও এদেশীয় তাদের দোসর রাজাকারদের বিতাড়িত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়াই। গত ডিসেম্বর ছিল আমাদের বিজয়ের মাস। বিজয়ের ৪৬তম দিবস আমরা পালন করলাম বিপুল আনন্দ উদ্দীপনা নিয়ে। ’৭১ সালে যখন যুদ্ধে যাই তখন ছিলাম তরুণ। এখন বার্ধক্যকাল চলছে। শুধু আমি একা নই, সকল মুক্তিযোদ্ধারই বার্ধক্যকাল চলছে নানা রোগ শরীরে নিয়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথভাবে সম্মান প্রদান করেছেন। মাসিক সম্মানীভাতা ছাড়াও খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ভাতা দিচ্ছেন। কোন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে কফিনে জাতীয় পতাকা মুড়িয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। উৎসব ভাতা প্রদানের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। চাকরিতে কোটা ভিত্তিতে নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সুযোগ করে দিতে কোটা পদ্ধতি করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুশির খবর বটে! যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তারা স্বাধীনতার পর অবৈধ পন্থায় অঢেল টাকার মালিক হননি। ফলে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা আজ অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবনের তাগিদে অনেকে রিক্সা পর্যন্ত চালাচ্ছেন- এমন বেদনাদায়ক খবর জাতীয় পত্রপত্রিকায় এর আগে বেরিয়েছে। এটা জাতির জন্য মোটেই গৌরবের নয়। গ্রামে অনেক অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমার জানা মতে, অনেক মুক্তিযোদ্ধা ক্যান্সার, লিভার ও কিডনিরোগের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তারা মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। সুতরাং আমি বলতে চাইÑ যে সকল মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৬৫ বছর হয়েছে তাদের চিকিৎসা ভাতা দেয়া হোক। দেশের সরকারী-বেসরকারী সকল হাসপাতালে তারা যাতে বিনা খরচে চিকিৎসা নিতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হোক। যে সকল মুক্তিযোদ্ধার বয়স এখন ৬০-এর ওপর তারা হয়ত আগামী ২০-২৫ বছরের মধ্যে মারা যাবেন। সেজন্য তারা জীবদ্দশায় যাতে চিকিৎসা করাতে পারেন তার ব্যবস্থা সরকার করবে এ আশা আমার। এ প্রসঙ্গে আমার কিছু প্রস্তাবনা আছে তা হলো- বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক এ সকল খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মাসিক রেশন পেয়ে থাকেন। এই রেশন এখন থেকে সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য দেয়া হোক। সরকারীভাবে মুসলমান মুক্তিযোদ্ধাদের হজ পালন, অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য তীর্থযাত্রা ও বিনা খরচে ভিআইপি মর্যাদায় রেল ভ্রমণের সুযোগ দেয়া হোক। এ কাজগুলো করতে সরকারের বেশি অর্থ খরচ হবে না। বলা হয় মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হলে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা তাদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারের অর্থ ব্যয় জাতির জন্য মোটেই অগৌরবের নয়, বরং গৌরবের। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মান দেখিয়েছেন তার জন্য আমরা রীতিমতো গৌরব করতে পারি। তাই এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, আমি যে প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছি তা বাস্তবায়ন করতে সরকারকে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে না। সুতরাং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে আবেদন, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার বিষয়ে আমার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়িত হলে আমরা আরও গৌরববোধ করব। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এটা সব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও গৌরবের। আর সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কন্যা। মুক্তিযোদ্ধারা তো এই সরকারের কাছেই আবদার করবে। লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী
×