ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বার্থে

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বার্থে

বাংলাদেশে বর্তমানের ঐতিহাসিক সত্য আবার উন্মোচিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে। এদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে করা ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইন ১৯৭৩’ সারা বিশ্বে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। যারা গণহত্যা ঘটিয়েছে তারা আদালতে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। এই বিচারের মাধ্যমে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর নৃশংস ভূমিকা ক্রমান্বয়ে জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে। ধর্মের নামে তাদের অধার্মিক রাজনীতির মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। বিচারের মাধ্যমে একদিকে মানবতার জয় হয়েছে, অন্যদিকে তারা অপরাধের প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। এটিই বাংলাদেশের বড় অর্জন। এটা সর্বজনবিদিত যে, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে ধর্মের নামে হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করতে চাইছে। একাত্তর সালের পূর্ব থেকেই তারা এই চর্চা করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করলেও তাকে হত্যার পর সে বিচার বন্ধ করা হয়েছিল শুধু নয়, কারাগারে আটক অপরাধীদের মুক্ত করাই শুধু নয়, তাদের রাজনীতিও সমাজে পুনর্বাসিত করেছিল সামরিক জান্তা শাসকরা। তথাপি বাংলার মানুষ গণহত্যার বিচারের দাবি ভুলে যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এ বিচার কার্যক্রম শুরু করে। যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে। আর বাঙালী জাতি হয়েছে অনেকটাই কলঙ্কমুক্ত। যুদ্ধাপরাধী আদালতকে জামায়াতীরা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছিল। এক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে পেয়েছিল রাজাকার-আলবদর পুনর্বাসনকারী সামরিক জান্তা শাসক জিয়া প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ও তার নেত্রীকে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য তারা হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচী ঘোষণা করে আর এই সময়ে তারা বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে বহু মানুষকে হতাহত করেছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা ধর্মকে উপজীব্য করে অধর্মের আচরণকেই সামনে এনে নৃশংসতা, নাশকতা, সহিংসতা, নির্মমতাকে পুঁজি করে যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, দেশবাসীর মন থেকে তা মুছে যায়নি। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদও বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই। তাদের পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। জঙ্গীবাদ মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সচেতন করার ক্ষেত্রে নির্মূল কমিটির আন্দোলনের বিশাল ভূমিকা তুলে ধরে বলেছেনও, স্বাধীনতার দুই দশক পরে হলেও এই আন্দোলন বিশাল অবদান রেখেছে। দেশবাসীও জানে এই সংগঠনটি নতুন প্রজন্মকে আলোড়িত করেছিল বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে পরবর্তীকালে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষকে নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সমাজের সর্বক্ষেত্র থেকে অপশক্তি উৎপাটন জরুরী। নতুবা স্বাধীনতাহীনতায় থাকতে হবে দেশবাসীকে। যা কারও কাম্য নয়।
×