অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যবহার না হতেই বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে নতুন করে মূলধন বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো। বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পাওয়া মূলধন কোন্ ধরনের কাজে ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট কিছু জানানোও হচ্ছে না। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে এ কাজ করে আসছে নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলো।
সাধারণত ব্যবসায়িক কর্মকা বৃদ্ধি, নতুন বিনিয়োগ বা আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন করে অর্থের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো পুনঃগণপ্রস্তাব (আরপিও), রাইট শেয়ার, ডিবেঞ্চার বা বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে নতুন করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু এসব পদ্ধতিতে মূলধন বাড়াতে হলে নানা ধরনের আইনী পদ্ধতি পরিপালন ও কোম্পানিকে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের জবাবদিহিতা না থাকায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বোনাস শেয়ার ইস্যু করে মূলধন বাড়াচ্ছে।
আগের বছরগুলোর মতো ২০১৬ সালেও শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে এমন কোম্পানিগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে এ প্রবণতা দেখা গেছে। আইপিওর অর্থ ব্যয় না হতেই কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়াচ্ছে। বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হলে কোম্পানি থেকে কোন ধরনের ক্যাশ আউটফ্লো হয় না। কিন্তু নগদ লভ্যাংশ দেয়া হলে ক্যাশ আউটফ্লো হয়। মূলত সমুদয় আয়ই কোম্পানিতে রেখে দেয়ার কৌশল হিসেবে বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে কোম্পানিগুলো। এতে কোম্পানির মূলধন বাড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে হারে কোম্পানিগুলোর আয়ের প্রবৃদ্ধি হয় না। এতে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ও সম্পদমূল্য কমে যায় এবং কোম্পানির লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতাও কমে যায়।
২০১৬ সালে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পর বোনাস শেয়ার ইস্যু করে যেসব কোম্পানি মূলধন বাড়িয়েছে তার মধ্যে রয়েছেÑ ইয়াকিন পলিমার, ইভিন্স টেক্সটাইলস ও ড্রাগন সোয়েটার এ্যান্ড স্পিনিং।
ইয়াকিন পলিমার ॥ কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে দুই কোটি শেয়ার ইস্যু করে। আর ব্যবহারের জন্য ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি এ টাকা পায়। প্রসপেক্টাস অনুযায়ী কোম্পানিটির এ টাকা ব্যবহার করতে প্রায় ১২ মাস লাগবে। তবে কোম্পানিটি সে টাকা ব্যবহার না করতেই এক মাসের মাথায় ৩০ অক্টোবর ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দেয়।
ইভিন্স টেক্সটাইলস ॥ কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আইপিওর মাধ্যমে ১৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে এক কোটি ৭০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে। কোম্পানিটি ব্যবহারের জন্য ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই এ টাকা পায়, যা ব্যবহারে প্রায় ১৮ মাস সময় লাগবে বলে প্রসপেক্টাসে তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে কোম্পানিটি এ টাকা ব্যবহার না করতেই আড়াই মাসের মাথায় ৪ অক্টোবর ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যু ঘোষণা দেয়।
ড্রাগন সোয়েটার এ্যান্ড স্পিনিং ॥ কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চার কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে আইপিওতে ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ টাকা ব্যবহার করার জন্য ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ হাতে পায়, যা ব্যবহারে প্রায় ১১ মাস সময় লাগবে বলে প্রসপেক্টাসে জানানো হয়। তবে কোম্পানিটি সে টাকা ব্যবহার না করতেই দুই মাসের মধ্যেই ১২ মে ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দেয়।
আইপিওর অর্থ ব্যবহার না হতেই বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াকিন পলিমারের সচিব মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, আইপিওতে টাকা উত্তোলনের পরে তা ব্যবহার না করতেই লভ্যাংশ দিতে হচ্ছে। না দিলে আবার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যেতে হবে। কিন্তু নগদ টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বোনাস শেয়ার দিয়েছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: