ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ৫ শীর্ষ কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ৫ শীর্ষ কর্মকর্তা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে না পেরে অনেকটা বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করেছেন বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের পাঁচ উর্ধতন কর্মকর্তা। ব্যাংকটি বলছে, স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাংকিং কার্যক্রম করতে না পারায় স্বেচ্ছায় তারা চাকরি থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ব্র্যাক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চাপে পড়েই চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে তাদের। ব্র্যাক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং কোম্পানি সেক্রেটারি পদত্যাগ করেছেন। মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ব্যাংকটিতে কর্মরত ছিলেন। হঠাৎ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। একই কারণ উল্লেখ করে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক মহিউদ্দিন এবং নাবিল মুস্তাফিজুর রহমান পদত্যাগ করেন। নাবিল মুস্তাফিজ চীফ রিস্ক অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। সিএফও হিসেবে কর্মরত ছিলেন রইস উদ্দিন আহমেদ। তিনিও পদত্যাগ করেছেন। এদের পাশাপাশি গ্রুপ কোম্পানি সেক্রেটারি, হেড অব লিগ্যাল এ্যান্ড রেগুলেটরি এ্যাফেয়ার্স ও ক্যামেলকোর দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা রইস উদ্দিন আহমেদও চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন। হঠাৎ কেন পদত্যাগ করলেন জানতে চাইলে মামদুদুর রশীদ বলেন, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েই পদত্যাগ করেছি। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। একই ভাবে নাবিল মুস্তাফিজ বলেন, কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন এ কথাটি ঠিক। তবে কে কী কারণে জানি না। আমি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছি। এরচেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না। তবে ব্যাংকটির সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটিতে আগে থেকেই ছাঁটাই করার একটি বাতিক রয়েছে। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক লেগেই থাকে। তবে একেবারে উর্ধতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পাঁচ কর্মকর্তার একই সময়ে পদত্যাগের বিষয়টিতে পুরো ব্যাংকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটির উর্ধতন এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের কাজের পরিবেশে পরিবর্তন এসেছে। চাইলেও নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করা কষ্টকর। জানা গেছে, প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে না পেরে অনেকটা বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করেছেন এসব উর্ধতন কর্মকর্তা। কারণ নীতিবহির্ভূতভাবে কাজ করে এখন আর কেউ বিপদে পড়তে চান না। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, উর্ধতন কয়েকজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন এটা সত্য। তবে তারা কোন প্রকার চাপে পড়ে পদত্যাগ করেননি। একজন ডিএমডি সুদভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আর চাকরি করবেন না। তাই পদত্যাগ করেছেন। একজন এএমডি ও একজন ডিএমডি যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় চলে যাবেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবেন। এজন্য তারা পদত্যাগ করেছেন। ইতোমধ্যে একজন ডিএমডির নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ১ মার্চ নতুন একজন ডিএমডি যোগদান করছেন। আমাদের বোর্ড এটি অনুমোদন দিয়েছে। তবে পদত্যাগ করা উর্ধতন পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে সিএফও ছাড়া চারজনের নাম এখনও ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত টপ ম্যানেজমেন্ট হিসেবে এখনও তালিকায় তারা রয়েছেন। জানা গেছে, সমালোচনা এড়াতেই ওয়েবসাইট থেকে নামগুলো সরানো হয়নি। গত বছরের শেষদিকে জোর করে তিনজন সিনিয়র অফিসারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। বিনা নোটিসে তাদের চাকরি চলে গিয়েছিল। তখনই জানা যায়, চাকরি থেকে বের করে দেয়ার জন্য বড় একটি তালিকা তৈরি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আস্তে আস্তে এদের সবাইকেই বের করে দেয়া হবে। ওই তালিকায় ১শ’ জনেরও বেশি কর্মকর্তার নাম ছিল বলে সূত্র জানায়। এ নিয়ে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ব্যাংকটিতে কর্মকর্তা ছাঁটাইয়ের নজির বেশ পুরনো। ২০১৪ সালেও বিনা নোটিসে একদিনে বিভিন্ন পদের ২৬ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। সে সময়কার তালিকায় ছিল আরও শতাধিক। একটি পর্যায়ে তালিকার সকলেরই চাকরি চলে গিয়েছিল। জানা গেছে, শুধু এ ব্যাংকেই নয়, পুরো ব্যাংকিং সেক্টরেই একটি প্রথা চালু রয়েছে। কর্মকর্তাদের হঠাৎ করেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। যাদের চাকরি থেকে অপসারণ করা হয় তাদের বলা হয় রিজাইন লেটার দিতে। কারণ, কোন কারণ ছাড়া তো কর্তৃপক্ষ তাদের অপসারণ করতে পারে না। সেটা করলে আবার আইনগতভাবে আটকে যাওয়ার সুযোগ থেকে যায়। তাই নিজেদের ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে কর্মকর্তাদের পদত্যাগপত্র প্রদানে বাধ্য করা হয়। তারাও ভয়ে সেটা দিয়ে দেন। কারণ তা না দিলে তো ব্যাংকের সঙ্গে যা কিছু দেনা-পাওনা থাকে তাও পাওয়া যাবে না। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও গত চার বছর ধরে স্প্রেড সীমা লঙ্ঘন করছে বেসরকারী মালিকানাধীন ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। দীর্ঘ এ সময়ে গত নবেম্বর মাসে ৯ শতাংশের নিচে নামে স্প্রেড। ঋণের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত সুদহার ও অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ কর্তন করছে বেসরকারী খাতের এ ব্যাংকটি।
×