ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ঘুরে এলাম প্রাচীন নগরী

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়  ঘুরে এলাম প্রাচীন নগরী

প্রতিদিনকার ব্যস্ততা যেন তাড়া করে এই বলে ‘উঠ ক্লাসে যাওয়ার সময় হয়েছে।’ বিষণœ মন নিয়ে, ফ্রেশ হয়ে, কখনও নাস্তা করে, আবার কখনও খালি পেটে, ভবিষ্যত জীবনের হাত ছানিতে বিভোর হয়ে, ক্লাস, এক্সাম, এ্যাসাইনমেন্টে নাকাল হওয়া। তার ফাঁকে আনন্দ ভ্রমণ, আর সেটা যদি হয় শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির তাহলে তো আনন্দের শেষ নেই। তার্কিকদের বিতর্কের মঞ্চ ছেড়ে মুক্ত আকাশের নিচে ঘুরাঘুরি আর সেটা যদি হয় দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে, তাহলে তো বিতার্কিকদের জ্ঞান ভান্ডারে নতুন জ্ঞানের সঞ্চার। অনেক কষ্টের পর মিলল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি, তার মানে এত দিনকার স্বপ্নের ট্যুর সত্যি হচ্ছে। ভ্রমণের স্থান প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও পানাম সিটি। তাই তো সবার প্রস্তুতির ব্যস্ততা। অবশেষে ৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখ ট্যুর, সূর্যি মামা উঁকি দেয়ার আগেই আমাদের ঘুম ভাঙল। হাড় কাঁপানো শীত ও চারদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরিবেশকে উপেক্ষা করেই, ফ্রেশ হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে হাজির। সেখানে কারও উপস্থিতি না পেয়ে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম, বাস যাত্রা শুরু করবে শেরেবাংলা হলের মাঠ থেকে। ইতিমধ্যে আমাদের সাবেক অভিভাবক মারুফ ভাই, অর্জুন ভাই, নাসিফ ভাইয়েরা এসে উপস্থিত। এরই মাঝে অন্যান্য কাজ সেরে ফেলা হলো। তাই তো আর দেরি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু। আর এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল গানের তালে নাচার চেষ্টা আর তাই তো নাচের সফলতা না আসলেও আনন্দের খোরাক এর অভাব হয়নি। এরই মাঝে সেরে ফেললাম সকালের নাস্তা। নাচ, গান, হৈ, হুল্লোড়ের ব্যস্ততার মাঝেই পৌঁছে গেলাম সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। তখন সময় প্রায় এগারটা ছুঁইছুঁই। ভিতরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হলো টিকেট প্রাপ্তি পর্যন্ত, অবশেষে ভিতরে প্রবেশ, শুরুতেই অবাক করে প্রাচীন স্থাপনার কারুকার্য আর স্থাপত্য শৈলীর অনুপম নিদর্শন। তাই তো সবাই ব্যস্ত এই নিদর্শনকে ফ্রেমে বন্দী করতে, আর এতেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় কেয়া আপুর। কারণ ফ্রেমে বন্দী করার দায়িত্বটা পরে যায় তার ওপর। আর পুরো পরিবেশে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে ফুলগাছ ও লতা পাতার সমারোহ। আর একটু সামনে যেতেই দেখা মিলল জাতির জনকের, মনে হচ্ছে রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ প্রতিধ্বনিত হচিছল ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ তাইত অনেকেই এ স্মৃতিকে ফ্রেমে বন্দী করে রাখল। এবার জাদুঘরে প্রবেশ, প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে দুর্লভ সব ঐতিহ্যের নিদর্শন। গ্যালারিগুলো হলো- নিপুণ কাঠ খোদাই গ্যালারি, গ্রামীণ জীবন গ্যালারি, পট চিত্র গ্যালারি, মুখোশ গ্যালারি, নৌকার মডেল গ্যালারি, উপজাতি গ্যালারি, তামা কাঁসা পিতলের তৈজসপত্র গ্যালারি, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়া মাটির নিদর্শন গ্যালারি, লোকজ অলংকার গ্যালারি, বাঁশ ও শীতল পাটি গ্যালারি ও বিশেষ প্রদর্শনী গ্যালারি। আর এতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রাম বাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জন জীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী। এসব শিল্প সামগ্রীতে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র ফুটে উঠেছে। ভবনটির সামান্য পুবে রয়েছে লোকজ স্থাপত্য কলায় সমৃদ্ধ ভবনে ‘জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর’। এতে রয়েছে দুটি গ্যালারি, আর প্রতিটি গ্যালারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় প্রাচীন জনজীবনের কথা। এছাড়াও আমরা দেখেছি পাঠগার, ডকুমেন্টশন সেন্টার, সেমিনার হল, ক্যান্টিন, কারুমঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান, বিভিন্ন রকমের বৃক্ষ, নৌবিহার ও মৎস্যশিল্পের সুন্দরব্যবস্থা। আর তাইত আমাদের অনেকেই নৌভ্রমণের লোভ সামলাতে পারল না, নেমে পড়ল নৌভ্রমণে। যদি ও অনেকে সাঁতার জানে না, এ যেন প্রকৃতির মায়া জীবনের মূল্যকে উদাসীন করে দিয়েছে। এভাবে ঘোরাঘুরি ও ছবি তোলার ব্যস্ততার মাঝেই ফিরে যাওয়ার ডাক পড়ল, ততক্ষণে ক্ষুধায় অনেকেই কাতর। খাওয়া দাওয়ার কাজটা সেরে ফেললাম বাসে বসেই। এবার যাওয়ার পালা তবে ক্যাম্পাসে নয় আরেকটি দর্শনীয় স্থান পানাম সিটি। ততক্ষণ বেলা ২টা প্রায়। সবাই মিলে হেঁটে রওয়ানা দিলাম মসলিনের মূল বাণিজ্য কেন্দ্রে। টিকেট প্রাপ্তির মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি মিলল। শুরুতেই নয়ন কাড়ল সবার, অপূর্ব ও নিপুণ কারুকাজ খচিত প্রাচীন সব ইমারতে। সরু রাস্তার দু’পাশে অট্রালিকা, সরাইখানা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুর ঘর, গোসলখানা, কূপ, নাচঘর, খাজাঞ্জিখানা, প্রমোদালয়। আরও দেখা মিলল চারশ’ বছরের পুরনো মঠ বাড়ি, যার পশ্চিমে রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কুঠি (নীলকুঠি) পোদ্দার বাড়ি, কাশীনাথের বাড়িসহ নানা প্রাচীন ভবন। এতে মোট বায়ান্নটি বাড়ি আছে। বাড়িগুলোতে স্থাপত্য ঔপনেবিশকতা ছাড়াও মোঘল, গ্রীক, গান্ধারা স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে স্থানীয় কারিগরদের শিল্প কুশলতার অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। নয়নাভিরাম দৃশ্যের সমাপ্তি না টানতেই ডাক পড়ল আরেকটি সেশনের, সেশনটি ফান বক্স ও নেতার আনুগত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, শেষ হয় পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে। সেশনটি ছিল নাচ গান কৌতুক ও মজার মজার অভিনয়ে ভরপুর। ফিরে যাওয়ার পালা, বাসে উঠে আসন গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই ড্রাইভার মামার যাত্রা শুরু। আর আমাদের সকল কøান্তির ছাপ মুছে মেতে ওঠা হৈ হুল্লোর ও নাচ গানে বাদ পড়ল না কেউ, যেন মনে হচ্ছে নাট্য মঞ্চ। আর এ ভ্রমণটাকে স্মরণীয় করে রাখতেই বিশেষ কিছু করা আর তা ঘটল হাতিরঝিলে এসে সবাই মিলে ফানুস উড়ানোর মধ্য দিয়ে। আর বাসে উঠে ক্যাম্পাসে রওনার সঙ্গে সঙ্গেই সমাপ্তি ঘটল স্বপ্নের ট্যুর। মাহমুদুর রহমান সোহেব
×