ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শীতে নগরীর বাতাসে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিকর বস্তুকণা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

এবার শীতে নগরীর বাতাসে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিকর বস্তুকণা

বিডিনিউজ ॥ বাতাসে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ ধুলা বা ক্ষতিকর উপাদান থাকলে তাকে সহনীয় পর্যায় বলা যায়, শীত মৌসুমে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ‘অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা’ ভাসছে দেশের প্রধান নগরীগুলোর বাতাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এবারই শীত মৌসুমে বায়ুরমান সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে দেখতে পাচ্ছেন তারা। পরিবেশ অধিদফতরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হক জানান, বর্ষায় দেশের প্রধান শহরগুলোর বাতাস ভাল অবস্থায় থাকলেও শীতে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং এই সময়েই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চাপ থাকে বলে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে ওঠে। সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাসমান ক্ষতিকর বস্তুকণা এখনকার বাতাসে বিরাজ করছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি রীতিমতো আতঙ্কজনক। বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ যেখানে ১০০ পিপিএম পার হলেই বিপজ্জনক মাত্রা বলে ধরা হয় সেখানে বুধবার নারায়ণগঞ্জের বাতাসে এর পরিমাণ ছিল ৮২১ পিপিএম, গাজীপুরে ৪৪০ পিপিএম, ঢাকায় ৪১৬ পিপিএম, চট্টগ্রাম ও বরিশালে ৩৫০ পিপিএম। এর ফলে শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, শ্বাসনালীর ক্ষতসহ নানা ধরেন মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে শিশু ও বয়স্কদের। মারাত্মক এই বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়াতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পিপিএম-পার্টস পার মিলিয়ন) এককে। এসব বস্তুকণাকে ১০ মাইক্রোমিটার ও ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস শ্রেণীতে ভাগ করে তার পরিমাণের ভিত্তিতে ঝুঁকি নিরূপণ করেন গবেষকরা। বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে তাহলে ওই বাতাসকে বায়ুমানের সূচকে (একিউআই) ‘ভাল’ বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে ‘মধ্যম’ মানের এবং ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-৫০০ হলে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। পরিবেশ অধিদফতরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (ক্লিন এয়ার এ্যান্ড সাসটেনেবল এনভায়রনমেন্ট-সিএএসই) প্রকল্প পাঁচ বছর ধরে প্রতিদিনের বায়ুমানের তথ্য প্রকাশ করে আসছে। ঢাকার তিনটি, চট্টগ্রামের দুটি পয়েন্টসহ আট নগরীর বাতাসে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস পর্যন্ত অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ নিয়মিত পরিমাপ করা হচ্ছে ‘সিএএসই’ প্রকল্পের মাধ্যমে। বাতাসে বস্তুকণা ছাড়াও কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ওজোন, সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রাও পরিমাপ করা হচ্ছে সিএএসই প্রকল্পে। সিএএসই প্রকল্পের তথ্যে দেখা যায়, শীত মৌসুমে দেশের প্রধান নগরগুলোতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ থাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বা তারচেয়েও খারাপ মাত্রায়। সিএএসই প্রকল্পের পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর বাতাসের মান অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। শীতের এ সময়ে শহর এলাকায় এমনিতেই বাতাসের মান খারাপ থাকে। তবে এবার আগের চেয়ে বেশি খারাপ যাচ্ছে। মঞ্জুরুল হান্নান খান বলছেন, শুকনো মৌসুমে এমনিতেই ধুলা বেশি থাকে। কিন্তু শহর এলাকায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে। যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বড় বড় নির্মাণ কাজ চলায় রাজধানীর সর্বত্রই এখন ধুলা। বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ইটভাঁটি, নির্মাণ কাজ, যাবনাহন, শিল্পকারখানা ও বালুমহাল- এ পাঁচটি বিষয় বায়ুদূষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে। ইটভাঁটি নিয়ন্ত্রণ, মোটরযান আইন, ইমারত নির্মাণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এ ধরনের দূষণের জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে এ আইন প্রয়োগ করা হলেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব। রাস্তাঘাটে নিয়ন্ত্রণহীন খোঁড়খুঁড়ি ও অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ বন্ধের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করলে ফল পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ঘরে-বাইরে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে অনুরোধ করেন জিয়াউল হক।
×