ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হলি আর্টিজানে হামলা

আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি শীর্ষ জঙ্গী জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি শীর্ষ  জঙ্গী জাহাঙ্গীর আলম

শংকর কুমার দে ॥ বহুল আলোচিত গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি। তাকে রবিবার ৭ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, যেই পাঁচ জঙ্গী বসুন্ধরার বাড়ি থেকে এসে গুলশানে জঙ্গী হামলা চালিয়েছে সেই বাড়িটির নাম ছিল অপারেশনাল হাউস। এই অপরাশেনাল হাউসে পরিবার নিয়ে থাকতো সে। জঙ্গী হামলার জন্য পাঁচ জঙ্গী অপরাশেনাল হাউস থেকে বের হয়ে আসার পর সে তার পরিবারসহ চলে এসে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় এক জঙ্গী আস্তানার বাড়িতে অবস্থান নেয়। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্যের কথা জানিয়েছেন গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম এই শীর্ষ জঙ্গী রাজীব গান্ধী। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শীর্ষ জঙ্গী রাজীব গান্ধী জবানবন্দীতে কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গী প্রশিক্ষকের নাম প্রশিক্ষণের স্থান, ধরন, অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহের বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারির হামলা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলে জঙ্গী তৎপরতার অনেক অজানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্র বের হয়ে এসেছে। রাজীব গান্ধী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ২০০৫ সাল থেকে গত ১১ বছর ধরে জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত। গত ১১ বছরের মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই উত্তরাঞ্চলে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। উত্তরাঞ্চলে তার সঙ্গে যারা কাজ করছে তার মধ্যে আজাদুল কবিরাজ, আবদুল খালেক, সাকিব মাস্টার ও আবদুল মান্নান অন্যতম। তারা জঙ্গী প্রশিক্ষকও। তারা এখনও পলাতক। উত্তরাঞ্চলের জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারীও তারা। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড জেএমবির কথিত প্রধান তামিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই নব্য জেএমবিতে সম্পৃক্ত হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় রাজীব গান্ধী। জিজ্ঞাসাবাদে রাজীব গান্ধী বলেছে, পুলিশের ভয়ে গ্রেফতার এড়াতেই একাধিক সাংগঠনিক নাম রাখা হয়েছে তার। তার প্রকৃত নাম মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হলেও সাংগঠনিক নাম রাখা হয় রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ ওরফে শান্ত ওরফে টাইগার ওরফে আদিল ওরফে জাহিদ। বিশেষ করে হিন্দু নাম রাখা হলে সন্দেহের বাইরে থাকার সুযোগ নিতেই রাজীব গান্ধী নামটি রাখা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের যেসব জঙ্গী হামলা ও হত্যাকা-ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তার উল্লেখ করেছে। রাজীব গান্ধী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, উত্তরাঞ্চলের জঙ্গীদের অনেকেই সীমান্ত পথে পার্শ্বর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আছে। সে নিজেও ধরা পড়ার আগে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে পালাতে পারেননি। রাজীব গান্ধীকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করেছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের দাবি। গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ রবিবার কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, শীর্ষ জঙ্গী রাজীব গান্ধী আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে দিতে রাজি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলে আর রিমান্ডে আনার প্রয়োজন নেই। নতুবা আবারও রিমান্ডে আনা হতে পারে। তবে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলা, উত্তরাঞ্চলের জঙ্গী তৎপরতা, অস্ত্র ও অর্থের যোগানদাতাদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে রাজীব গান্ধী।
×