ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘টাকা খরচ করেই এটা করানো হয়েছে ইউনূস সাহেবদের তো অনেক টাকা’

বিষয়টি পরিকল্পিত ॥ ডাভোসে রামপাল বিতর্ক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

বিষয়টি পরিকল্পিত ॥ ডাভোসে রামপাল বিতর্ক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সুন্দরবনের অদূরে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে সুইজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনে প্রশ্ন উত্থাপনের বিষয়টি ‘পরিকল্পিত’ বলেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবেই রামপাল নিয়ে বলানো হয়েছে। ইউনূস সাহেবদের (নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস) তো অনেক টাকা। টাকা খরচ করে হয়ত এটা বলানো হয়েছে। সুইজারল্যান্ডে পাঁচ দিনের সফর শেষে শনিবার দেশে ফিরে আসার পর তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা সাক্ষাত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদের এসব কথা বলেন। সাক্ষাত করতে যাওয়া একাধিক কেন্দ্রীয় ও সহযোগী নেতারা জনকণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্রগুলো জানায়, সাক্ষাত করতে যাওয়া নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তার সময় এক সহযোগী সংগঠনের নেত্রী রামপাল নিয়ে সম্মেলনে আল গোরের প্রশ্ন উত্থাপনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনূস সাহেবদের তো অনেক টাকা। টাকা খরচ করেই হয়ত তারা এসব বলাতে পারে। তবে আমিও বিশ্ব নেতা ও পরিবেশবাদীদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলে এসেছি- আপনারা বাংলাদেশে আসেন। আমরা ঘুরে ঘুরে সব দেখাব। পৃথিবীর যেকোন পরিবেশবাদী রামপাল প্রকল্প দেখতে আসতে পারেন।’ সাক্ষাত করতে আসা নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১০ মিনিট কুশল বিনিময় করেন। এ সময় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগে তো এসব সম্মেলনে (ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম) বাংলাদেশ দাওয়াত পেত না। এখন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখে বিদেশীরা অভিভূত। তাই বাংলাদেশের ব্যাপারেও তারা আগের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। এ সময় কয়েকজন নেতা বরফের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার ছবি তোলার বিষয়টি তুলে ধরে প্রশংসা করেন। সূত্র জানায়, এ সময় একটি বিদেশী সিনেমার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই ছবিতে দুই বোন বরফের মধ্যে খেলা করছিল। বরফের দেশে গেলাম তাই আমরা দু’বোনও ছবি তুললাম। কী যে ঠা-া। সেই মাইনাসের দেশ থেকে এখন প্লাসে ফিরে আসলাম।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে আগামী ২৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনুষ্ঠানে সবাইকে একটু একটু বক্তব্য রাখতে দিও, আর অনুষ্ঠানের খরচ সাবেক ছাত্র নেতাদের কাছ থেকে নিও।’ এদিকে পাঁচ দিনের সফর শেষে শনিকার সকাল ১১টায় দেশে ফিরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান মন্ত্রিসভার সদস্যসহ উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবের আমন্ত্রণে সংস্থার ৪৭তম বার্ষিক সভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে যান। অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন। শেখ হাসিনাই প্রথম বাংলাদেশী কোন নির্বাচিত নেতা যিনি এই বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, শীর্ষ ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, যোগাযোগবিদ, চিন্তাবিদ এবং প্রযুক্তিবিদগণ নানা গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী এই বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ ছাড়াও ডব্লিউইএফ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। অর্ধশতাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ প্রায় তিন হাজার প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পানি ব্যবস্থাপনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, কর্মসংস্থানসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
×