ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে বাফুফের নতুন কৌশল!

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে বাফুফের নতুন কৌশল!

রুমেল খান ॥ আয়োজন বিশাল ও চোখ ধাঁধানো, তবে সে তুলনায় উপহার নগণ্য! কদিন আগে ভারতে গিয়ে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ দল। সেই সাফল্যের স্বীকৃতস্বরূপ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে জাতীয় মহিলা দলকে সংবর্ধনা দেয় বাফুফের সিনিয়র সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর এনভয়। বাফুফে ভবনের সর্বত্র রঙ্গিন বেলুনে ছেঁয়ে গেছে। সাজানো হয়েছে লাল-নীল কাপড়ে। এমন আয়োজন দেখে যে কেউই ধরে নেবে নিশ্চয়ই বড় কোন পুরস্কার পাবে সাবিনারা। তবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাদের হাতে তুলে দেয়া হলো নগদ মাত্র ২০ হাজার করে টাকা। পুরো দল পুরস্কার পেলেও দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন এবং সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু উপস্থিত ছিলেন না। অঢেল অর্থের মালিক হলেও খরচের ব্যাপারে সালাম মুর্শেদীর কোন সুনাম ছিল না আগে থেকেই। বিশেষ করে ফুটবলের বেলায়। শনিবার সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো আরেকবার। এত বছর চুপচাপ থাকার পর এখন মেগাপ্ল্যান দিয়ে দেশের ফুটবলকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে চায় বাফুফে। যদিও নতুন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যথাযথ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে না তারা। ঢিমেতালে এগুচ্ছে কার্যক্রম। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছেÑ সুযোগ থাকার পরও এএফসির বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ ফুটবল দল। এরজন্য দায়ী বাফুফের চরম অদূরদির্শতা। ভুটানের কাছে হারার পর ‘এএফসি সলিডারিটি কাপে’ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের। কিন্তু নাম এন্ট্রি না করেও তাতে অংশ না নেয়াতে এএফসি বড় রকম আর্থিক জরিমানা করে বাফুফেকে। এখানেই শেষ নয়। জর্দানে কদিন পর অনুষ্ঠিতব্য মহিলা এশিয়া কাপের বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ ছিল বাংলাদেশ দলের। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপারÑ এই টুর্নামেন্টের জন্য বাফুফে নামই এন্ট্রি করেনি। অথচ সর্বশেষ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ মহিলা দলের বর্তমান অবস্থান ১১৪ নম্বরে, যেখানে পুরুষ দলের অবস্থা তাদের ইতিহাসেরই জঘন্যতম (১৯০)। এই যখন অবস্থা, তখন কি না নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল এবং চলমান ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাফের রানার্সআপ মহিলা দলটিকে কদিন ধরে সংবর্ধনা দিতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে বাফুফে। শুধু তাই নয়, বাফুফের কেউ কেউ আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে তার নিজের বাসায় ডেকে মহিলা দলকে ভুরিভোজনও করাচ্ছেন। শনিবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এনভয় গ্রুপের ডিরেক্টর মুর্শেদীর ছেলে ইশমাম সালাম বলেন, ‘সাফে মেয়েরা রানার্সআপ হয়েছে। তাদের উৎসাহিত করতেই এই আয়োজন। সাফল্য পাওয়ায় তাদের অশেষ ধন্যবাদ। আশাকরি আগামীতেও তারা আরও ভাল করবে।’ সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘যারা আজ দেশের জন্য এই সম্মান বয়ে এনেছে, তাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন। আমার বিশ্বাস, এই ফল দিয়ে এদেশের ফুটবল আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। নতুন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং আমাদের ফুটবল উন্নতি করবে। এবার আমরা বয়সভিত্তিক দলগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এখানে ছেলে-মেয়ে যারাই ভাল করবে তাদের নিয়েই আমরা দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প করব এবং তাদের জন্য যা করা দরকার, তাই করব।’ অনুষ্ঠানে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি মেয়েদের নিয়ে কোন কথা বলেননি। গত অক্টোবরে ‘এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফ-২’এ ভুটানের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। এর ফলে আগামী তিন বছর বাংলাদেশ ফিফা ও এএফসি স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের ফুটবলের এই অধঃপতনের দায়ভার কোনভাবেই এড়াতে পারে না বাফুফে। গত নয় বছরে তৃণমূল ফুটবল বলতে গেলে নির্বাসনেই চলে যায়। ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না’Ñ এই প্রবাদটিই এখন যেন শতভাগ ফলে যায় বাফুফের বেলায়। গত নয় বছরে পাত্তাই দেয়া হয়নি তৃণমূল এবং বয়সভিত্তিক ফুটবলকে। প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল পুরুষ জাতীয় দলকে। কিন্তু তাদের নিয়ে প্রত্যাশার ফল যে কি হয়েছে, সেটা পরিষ্কার। অথচ অবহেলিত মেয়েদের ফুটবল নিয়ে যেখানে তেমন আশা ছিল না, সেখানেই কি না অভাবিত সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১০ ও ২০১৪ সালে সেমিফাইনাল খেলে, ২০১৬ আসরে রানার্সআপ হয়। এছাড়া সাউথ এশিয়ান গেমসে ২০১০ সালে করায়ত্ত করে তাম্রপদক। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ‘এফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়নশিপে’র শিরোপা জেতে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ কোয়ালিফায়ার্সে’ ‘সি’ গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে উন্নীত হয় বাংলাদেশ অ-১৬ মহিলা দল।
×