ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ায় শ্রীমতী খালে চলছে মাটি লুটের মহোৎসব

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

পটিয়ায় শ্রীমতী খালে চলছে মাটি লুটের মহোৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ২১ জানুয়ারি ॥ খাল খননের নামে চট্টগ্রামের পটিয়ায় চলছে মাটি লুটের মহোৎসব। বেশ কিছুদিন ধরে শ্রীমতী খালের বাহুলী-কচুয়াই ও হাইদগাঁও সীমানা এলাকায় স্কেবেটর দিয়ে বালু মাটি কেটে নিলেও অদৃশ্য কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড নীরব রয়েছে। তেমনি খালের দুই পাশের কৃষিজমি কেটে মাটি হরিলুট করলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। পটিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন বেলাল বাধা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারী দলের প্রভাবশালী মহল জমির মালিককে সামান্য টাকা দিয়েই খাল খননের নামে খালের মাটি ও খালের দুই পাড়ের কৃষিজমি কেটে তা লুট করে নিচ্ছে। বর্তমানে বাহুলী, কচুয়াই, পারিগ্রাম ও হাইদগাঁও গ্রামের অসংখ্য কৃষকের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এদিকে খালের বালু ও মাটি লুটকারীরা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার দিয়ে শ্রীমতী খালের নক্সা পাল্টে কৃষিজমির ওপর দিয়ে তা বয়ে নিতে পাঁয়তারা করছে। শনিবার সকালে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার বদরুজ্জামান ও সহকারী তৌহিদকে ফিতা দিয়ে মেপে তা পরিমাপ করতে দেখা গেছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাল খননের কোন টেন্ডার বা অনুমোদন ছাড়াই সরকারী দলের প্রভাবশালী মহল শক্তি প্রদর্শন করে শ্রীমতী খালের বাহুলী এলাকায় খালের বালু মাটি ও দুই পাড়ের কৃষিজমির মাটি হরিলুট শুরু করেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের পটিয়া বাইপাস সড়কের উন্নয়নকাজ তড়িঘড়ি সারতে মূলত শ্রীমতী খালের বালু মাটি ও খালের দুই পাড়ের কৃষিজমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। গত ২৫ নবেম্বর পটিয়ার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ৬২ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বাইপাস সড়কের টেন্ডার কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ঠিকাদার বেশি লাভের আশায় শ্রীমতী খালের বালু মাটি ও দুই পাড়ের কৃষিজমির মাটি কেটে তা বাইপাস সড়কে ব্যবহার করছে। খালের পূর্ব পাড়ের পারিগ্রাম এলাকার কৃষক পুলিন সরকার বলেন, বর্ষা মৌসুমে শ্রীমতী খালের ভাঙ্গনে আশপাশের অসংখ্য মানুষের কৃষিজমি ও বাড়ি বিলীন হয়। তিনি ও তার ভাই পূর্ণ সরকার দীর্ঘদিন ধরে খালের পূর্ব পাড়ে সবজিক্ষেত করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। চাষাবাদের এ কৃষি জমি কেটে নেয়ার খবরে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পটিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর আলম বলেন, খালের দুই পাড়ে যে জমি রয়েছে এতে চাষবাদ তেমন হয় না। এজন্য জমির মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে বালু মাটি কিনছেন। শুধু বাইপাস সড়কের জন্য মাটি কিনতে এসেছেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সামান্য টাকা দিয়ে খাল ও খালপাড়ের কয়েক শ’ একর কৃষিজমির বালু মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ স্বীকার করেছেন, চলতি মৌসুমে পটিয়ার কোথাও খাল খননের টেন্ডার হয়নি এবং খননকাজ হচ্ছে না। কারা কিভাবে খালের মাটি ও খালের দুই পাড়ের কৃষিজমির মাটি কেটে নিচ্ছে তা তিনি খতিয়ে দেখবেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ কাজে জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন।
×