ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুবশক্তির বিকাশে-

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

যুবশক্তির বিকাশে-

বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ‘ডিজিটাল লিডারস পলিসি মিটিং অন জব’ শীর্ষক সেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যুবশক্তির সৃজনশীলতা বিকাশে বৈশ্বিক জ্ঞানকে স্বাগত জানানোর কথা বলেছেন। এটা ঠিক বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে হলে জ্ঞানের সর্বাধুনিক আলোয় স্নাত হওয়ার কোন বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে তথ্য ও জ্ঞান মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে। তথ্যনিষ্ঠ থাকা এবং জ্ঞানার্জনে ব্রতী হওয়ার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন লক্ষ্য। সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য মেধা ও প্রতিভাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর কথা গুণীজনরা বলে থাকেন। সেক্ষত্রে বৈশ্বিক জ্ঞান অর্জন আবশ্যিক। আমাদের তারুণ্যকে কর্মমুখী বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দি ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট গ্রোথ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৭’ অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স ও মিসরের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলোকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে। ৭৯টি দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচক বা আইডিআই র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬ নম্বরে। এর আগে লন্ডনভিত্তিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ ভবিষ্যতের ১০টি উদীয়মান বাজার হিসেবে যে দেশগুলোকে চিহ্নিত করে তার শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুুমবার্গও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীত হচ্ছে। পোশাক ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য, ওষুধসহ অন্যান্য পণ্য। জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের অর্জন আশাব্যঞ্জক। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কমেছে সরকারের দায়। সমমানের অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় এখানে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে ঋণ ও মূলধন পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজতর। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সবচেয়ে আশার কথা হলো স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের তরুণ সমাজ মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠছে। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এ যুগে অপরিহার্য। সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সজাগ বলেই নতুন নতুন পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। দেশে এখন মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ২৩ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে আরও ১৪ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরির কাজ চলছে। প্রায় দেড় লাখ মাধ্যমিক ও হাইস্কুলের শিক্ষকদের সমন্বয়ে ‘টিচার্স পোর্টাল’ নামের একটি ওয়েব পোর্টালও গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষা উপকরণ সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই পোর্টালে ২০২১ সাল নাগাদ দেশের প্রায় ৯ লাখ শিক্ষককে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি বৃহৎ ই-লার্নিং প্লাটফর্ম কাজ করছে, যার নাম মুক্তপথ। এ প্লাটফর্মটির মাধ্যমে যে কোন স্থান থেকে বাংলাদেশীরা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান তৈরি করে নিতে পারবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈশ্বিক জ্ঞানের সহায়তায় সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে দেশের যুবসমাজ দেশের মুখ আরও উজ্জ্বল করুকÑ এটাই প্রত্যাশা।
×