ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষক পাচ্ছেন বিশেষ ঋণ সুবিধা

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষক পাচ্ছেন  বিশেষ ঋণ সুবিধা

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ কৃষি উন্নয়নে এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্প শেষ হলেও ঋণ সুবিধা পেতে যাচ্ছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। দক্ষিণবঙ্গের ১৫ জেলা ও উত্তরবঙ্গের ২৭ জেলার ৮৮ উপজেলার কৃষকরা পাবেন এই সুবিধা। দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের গ্রুপভুক্ত দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষক এই ঋণ সুবিধা পেতে থাকবেন। আর এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত এই সুবিধা দেয়া হবে। আবার গ্রুপে নাম লিখিয়ে নতুন কৃষকও এই সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন। খুলনা বিভাগসহ দেশের ১৮ জেলার কার্যক্রম পরিচালিত যশোর আঞ্চলিক অফিসের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ ডক্টর সুনীল কুমার রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ২০১০ সালে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদনে দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্প একনেকে পাশ করে সরকার। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের তৃণমূল কৃষকের জন্য সহজ শর্তে প্রায় সাড়ে ৩১৬ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় প্রায় ৬৫ কোটি টাকা দিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট পরে ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। চার ধরনের গ্রীষ্মকালীন সবজি ও শস্য এ প্রকল্পের আওতায় রাখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে টমেটো, সিম, করলা, উস্তে, বেগুন, পেঁপে, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাশরুম, মরিচ বীজ, কলা, লিচু, কুল, পেয়ারা, ভুট্টা ও নারকেল চাষ। তিন ধরনের কৃষককে ঋণের আওতায় রাখা হয়। দেড় বিঘার জমির মালিককে প্রান্তিক চাষী, সাড়ে তিন বিঘা জমির মালিককে ক্ষুদ্র চাষী ও সাড়ে সাত বিঘা পর্যন্ত জমির মালিককে মাঝারি ধরনের কৃষক ধরে প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। তবে এ তিন ধরনের মধ্যে প্রান্তিক চাষীদের শতকরা ৬০ জনকে এ সুবিধা দেয়া হয় গ্রুপের মাধ্যমে। জমির কাগজপত্র পরীক্ষা, জমি কোন চাষের উপোযোগী, স্থানীয় বাজারসহ উৎপাদনের নানা টার্গেট দেয়া হয়। উৎপাদিত ফসল বিক্রির পর সহজ শর্তের ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয় এ প্রকল্পে। যশোর রিজিওনাল অফিসের আওতায় যে ৪৩টি উপজেলা রয়েছে সেখানে কৃষকরা ভাল সাফল্য দেখান। শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পে যে শস্য উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে সে ধরনের মাটি খুলনা অঞ্চলে থাকায় শস্যগুলো প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। আর তার বাজার মূল্যও চড়া পাওয়া যায়। কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতায় প্রকল্পটি দেশের কৃষি সেক্টরে সাড়া ফেলায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ থেকে বাড়িয়ে ২০১৭ পর্যন্ত করা। বাংলাদেশে পরিচালিত এডিবির ৬৭টি প্রকল্পের মধ্যে বহুমুখী শস্য প্রকল্পটি প্রথম হওয়ায় এটি শেষ হলেও ঋণ সুবিধাটি থেকে যাচ্ছে। সরকার টেন্ডারের মাধ্যমে ব্র্যাক বাংলাদেশকে ঋণ বিতরণের দায়িত্ব দিয়েছে। দেশের দুই লাখ ৪০ হাজার চাষী এই ঋণ সুবিধা পেতে থাকবেন আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত। কৃষকরা ৫ হাজার থেকে তিন লাখ আর উদ্যোক্তারা এক লাখ থেকে তিন লাখ পর্যন্ত এই ঋণ পাবেন। এ ব্যাপারে খুলনা বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিজিওনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার ডক্টর সুনীল রায় জানিয়েছেন, প্রকল্পটির সাফল্যে এডিবি খুশি। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এগিয়ে চলায় তিন বার পুরস্কৃতও হয়েছে। দ্বিতীয় মস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্প শেষ হলেও কার্যত মাঠপর্যায়ে এর কাজ চলতেই থাকবে। কৃষকদের ২০ জনের দল তৈরি করে ঋণ সুবিধা দেয়া অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, ২ লাখ ৪০ হাজার সুবিধাভোগীর কৃষক ছাড়াও নতুন করে কেউ গ্রুপে আসলে সেও এই ঋণ সুবিধা পেতে পারেন। সহজ শর্তে এই ঋণ দেয়া হবে।
×