ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিহীন উন্নয়ন তবে কথার কথাই!

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

রাজনীতিহীন উন্নয়ন তবে কথার কথাই!

অনলাইন ডেস্ক ॥ কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি রাজনীতি করতে চান না। সেই সঙ্গে ‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর’ তত্ত্বকে সামনে রেখে মোদীর এ-ও আশ্বাস ছিল যে, বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলিকেও সমান গুরুত্ব দেবে তাঁর সরকার। বিশেষ করে অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে রাখা হবে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশকে। কিন্তু বাস্তবে কি সেটাই করছে তাঁর সরকার! রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুক্রবার শিল্প সম্মেলন শুরু হলো কলকাতায়। অথচ সেই সম্মেলনে কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধিকেই দেখা গেল না! সম্মেলনে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে গোড়ায় সম্মতি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর নাম ছাপাও হয়ে গিয়েছিল আমন্ত্রণপত্রে। কিন্তু পরে ‘দুঃখের সঙ্গে’ জেটলি জানিয়ে দেন, অনিবার্য কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারছেন না। কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রী তো দূরস্থান, কোনও সচিবও এ দিন উপস্থিত ছিল না শিল্প সম্মেলনে। ফলে সম্মেলনের মঞ্চ থেকে এই প্রশ্নও উঠল, তবে কি পূর্বাঞ্চলের বিকাশের প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গেল মোদী সরকার! কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকে এখন বাজেট তৈরির কাজ চলছে। ফলে জেটলির ব্যস্ত থাকারই কথা। কিন্তু ঘটনা হল, তিনি এ দিন সকালে ভোটের প্রচার করতে চলে যান পঞ্জাবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এর অর্থ একটাই। যুক্তরাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের তুলনায় রাজনৈতিক কর্মসূচিই প্রাধান্য পেয়েছে জেটলির কাছে। বিজেপি সূত্র বলছে, নোট বাতিলের পরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের বাতাবরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার বিজেপি নেতারা চাইছিলেন, জেটলি যেন শিল্প সম্মেলনে না আসেন। একই মত পোষণ করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। জেটলির অবশ্য মত ছিল, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রভাব কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের উপরে পড়া উচিত নয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে কলকাতা না যাওয়ারই পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। জেটলি এ দিন ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত হচ্ছে। তা নিয়ে যে ভাবে রাজনৈতিক আক্রমণ হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। তা ছাড়া, রাজনীতির কারণে রাজ্যের পাওনা কোনও কেন্দ্রীয় বরাদ্দ তো তিনি ছাঁটাই করেননি। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণ তো রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না। উনি কুরুচিপূর্ণ ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন। সৌজন্য দেখানোর দায় কি শুধু কেন্দ্রের?’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারও বলেন, ‘‘আমাদের সরকার কোনও রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের পক্ষে নয়। কিন্তু সব কিছুকেই যে বিজেপি বনাম তৃণমূলের পরিণত করা উচিত নয়, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বুঝতে হবে। আলোচনা ও সমন্বয়ের পরিবেশ তৈরির জন্য তাঁকেও তাপমাত্রা কমাতে হবে।’’ বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা এ দিন বলেন, ‘‘মমতা যখন কেন্দ্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছিলেন তখন অরুণ জেটলি, পীযূষ গয়াল, নিতিন গডকড়ীর মতো মন্ত্রীরা শিল্প সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতি আর নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’ রাজনীতিকদের বড় অংশের বক্তব্য, তার মানে তো এই যে, উন্নয়নের প্রশ্নেও রাজনীতি করে মোদী সরকার! না হলে কোনও না কোনও মন্ত্রী, নিদেনপক্ষে শিল্প বা বাণিজ্য মন্ত্রকের কোনও সচিবকে পাঠাতে পারত কেন্দ্র। ঘরোয়া আলোচনায় ঠিক এই কথাটাই এ দিন বলেছেন মোদীর দুই মন্ত্রী। তাঁদের মতে, কেন্দ্রের কোনও নীতি নিয়ে রাজ্য সমালোচনা করতেই পারে। হতে পারে মমতার সমালোচনার ভাষা আপত্তিকর। কিন্তু তা মোকাবিলার জন্য তো রাজনীতির পথ খোলা রয়েছে। তার বদলে কেন্দ্র যা করল, তা মোদীর ‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর’ তত্ত্বকেই ধাক্কা দিল। এতে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত বাড়বে বই কমবে না। তার দায়ও নিতে হবে মোদীকেই। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×