ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিবেক ওয়াদওয়া

কৃত্রিম বুদ্ধি সংযোজন হচ্ছে রোবটে

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

কৃত্রিম বুদ্ধি সংযোজন হচ্ছে রোবটে

২০১৩-এর ছায়াছবি ‘হার’-এ নিঃসঙ্গ লেখক তার সব রকমের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নির্মিত ডিজিটাল এ্যাসিস্ট্যান্ট সামান্থার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। সামান্থা তার সব কাজই করে দেয়। ই-মেইল বেছে দেয়, বই ছাপাতে সাহায্য করে। ব্যক্তিগত উপদেশ দেয় এবং শেষ পর্যন্ত তার গার্লফ্রেন্ড হয়ে দাঁড়ায়। বলাবাহুল্য ডিজিটাল এ্যাসিস্ট্যান্ট সামান্থা কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন সফট্ওয়্যার যা বিস্ময়কর গতিতে শিখতে পারে। সামান্থা বৈজ্ঞানিক কল্পকথার জগতে কমপক্ষে আরও এক দশক থাকবে। তবে বিশেষ নামে তার চেয়ে কম কাজের ডিজিটাল এ্যাসিস্ট্যান্টের অস্তিত্ব আগে থেকেই রয়েছে। ২০১৭ সালে আমরা আমাদের বাড়িঘরে এই প্রযুক্তির আরও বিস্ময়কর অগ্রগতি দেখতে পাব। চলতি ছুটির মৌসুমে বিশেষ নামের রোবটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে এ্যামাজন ডটকমের ইকো এবং গুগল হোম। এই রোবটগুলো স্পীকারের মাধ্যমে তাদের ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের বিল্ট ইন মাইক্রোফোনে রুমের বাইরে থেকে শুনতে পায়। ইকো আলেক্সো নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার এলইডি রিংটি ব্যবহারকারীর দিকে জ্বলে উঠবে। সে যে শুনতে পাচ্ছে এর দ্বারা যেন সেটাই স্বীকার করে নেয়া হলো। এই রোবটটি প্রশ্নের জবাব দেয়, মিউজিক বাজায়, এ্যামাজন পণ্যের ফরমায়েশ দেয় এবং কৌতুক বলে। অন্যদিকে গুগল হোম এগুলো ছাড়াও গুগুল এ্যাকাউন্ট দেখাশোনা করে, ই-মেইল পাঠ করে ও লিখে এবং দিন তারিখ নোট রাখে। গুগল ও এ্যামাজন উভয়েই তাদের এসব ডিভাইস থার্ড পার্টি ডেভেলপারের হাতে দিয়েছে যারা আবার পিৎসা অর্ডার দেয়ার টিকেট বুক করার, লাইট জ্বালান-নিভান এবং ফোনকল করার ক্ষমতা যোগ করে দিয়েছে। আমরা শীঘ্রই এসব রোবটকে স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় দেখতে পাব। ফলে এই ডিভাইসগুলো মানুষকে ব্যায়ামের উন্নততর কৌশল উদ্ভাবনে এবং সময়মতো ওষুধ খাওয়ার কথা মনে রাখতে সাহায্য করবে। শুধু কি তাই এরা ডিশওয়াটার ও মাইক্রোওয়েভও নিয়ন্ত্রণ করবে, রিপ্রিজারেটরে কি রয়ে গেছে দেখতে এবং জরুরী অবস্থায় এ্যাম্বুলেন্স ডাকবে। অনেক আগেই আমাদের সংসারের সাজসরঞ্জামগুলো ইলেকট্রিফায়েড হয়েছে অর্থাৎ বিদ্যুতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অচিরেই সেগুলো ‘কগনিফাইড’ হবে অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হবে যার সুযোগ পাওয়া যাবে ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে। আমরা আমাদের মেশিনের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতে পারব যা স্বাভাবিক মনে হবে। মাইক্রোসফট কণ্ঠস্বর চেনার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে যা মানুষের মতোই বক্তব্য দিতে এবং বহুবিধ ভাষায় অনুবাদ করতে পারবে। গুগল কণ্ঠস্বর সংশ্লেষণের এমন এক ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে যা মানুষের থেকে পার্থক্য টানা কঠিন। রোবট আমাদের ওভেনকে বলবে কিভাবে আমাদের খাবার রান্না করতে চাই এবং ওভেনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রশ্ন করবে। কৃত্রিম বুদ্ধির বা এআইএর অগ্রগতির ফলেই এটা সম্ভব হয়ে উঠেছে বিশেষত ডিপ লার্নিং নামে একটি ক্ষেত্র আছে যেখানে মেশিন নিউরাল নেটওয়ার্কের মধ্যেই শিখে। সেই নেটওয়ার্কে তথ্যাবলী স্তরে স্তরে প্রসেস করা এবং স্তরগুলোর মধ্যকার সংযোগগুলো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জোরদার হয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে তারা অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের মতোই শেখে। শিশু যেমন তারা বাবা-মা খেলনা জীবন্ত প্রভৃতিকে চিনতে শেখে তেমনি নিউরাল নেটওয়ার্কগুলোও দৃষ্টান্ত দেখে ও সংযোগ গঠন করে শেখে। গুগলের এআই সফট্ওয়্যারও বিড়ালের এক কোটি দৃষ্টান্ত দেখার পর দুই চোখে, এই কানওয়ালা লোমশ শরীরের এই প্রাণীটিকে চিনতে শিখেছে।
×