ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সফটওয়্যার সমৃদ্ধ গাড়ি মানুষের খুব কাছাকাছি

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

সফটওয়্যার সমৃদ্ধ গাড়ি মানুষের খুব কাছাকাছি

সারাদিনের পরিশ্রমের পর একরাশ ক্লান্তি ও হতাশা নিয়ে আপনি গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি আপনা থেকেই সফট মিউজিক বাজাতে শুরু করল, টেম্পারেচার কমিয়ে দিল। অপরিচিত এলাকায় গিয়ে পথ হারিয়ে ফেললেন, গাড়ি নিজ থেকে ড্রাইভিংয়ের দায়িত্ব নেয়ার অফার দিল। গাড়ি চালাতে চালাতে বিরক্তবোধ করছেন। গাড়ি আপনার সঙ্গে সংলাপ জুড়ে দিল। চালক ও অটোমোবাইলের মধ্যে এই যে ব্যতিক্রমী ধরনের মিথষ্ক্রিয়া এটাই হলো সম্প্রতি লাস ভেগাসে সিইএসের বার্ষিক প্রযুক্তি সম্মেলনে হোন্ডা ও টয়োটা কোম্পানির উন্মোচিত ধারণার মুখ্য বিষয়। সম্মেলনের বক্তব্য থেকে এই দাঁড়ায় যে অদূর ভবিষ্যতে মোটরগাড়ি অধিকতর নিরাপদ বা অধিকতর দক্ষই শুধু হয়ে উঠবে না, সেগুলো হবে আমাদের সঙ্গী বা সহচর, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর তাদের চোখ থাকবে। এ জাতীয় গাড়ির আজ অস্তিত্ব আছে কেবলমাত্র আংশিকভাবে কার্যকর ধারণা হিসেবে। এই গাড়িগুলো প্রতিটি যাত্রীর পছন্দ- অপছন্দ, তারা কিভাবে কথা বলে, কোন্ গায়গাগুলোতে ঘন ঘন যায় সে সংক্রান্ত তথ্যাবলী মজুদ করে ও মুখস্থ করে রাখে। আর এ সবই করে অরোহীদের স্বার্থের খাতিরে। এভাবেই অটোমোবাইলের জগতে পরিবর্তন আসছে। অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস আরও জনপ্রিয় হবে। এরপর জনপ্রিয়তা পাবে স্বয়ংচালিত ড্রাইভিং। লোকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ফেলতে পারে। এতে করে প্রাইভেট কার মালিকানার ব্যবসায় মডেল নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে। আগামী কয়েক দশকে গাড়ি কেনাবেচার মৌলিক ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। চালকও যাত্রীদের সম্পর্কে তথ্য গাড়ি নির্মাতাদের কাছে দারুণমূল্য বহন করবে। কৃত্রিম বুদ্ধি ও বড় বড় উপাত্তের বদৌলতে গাড়ি হয়ে দাঁড়াবে ফোন ও কম্পিউটারের পর ক্রেতাদের অভ্যাস জানবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। গাড়ি কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা অটোমেকারের চাইতে আর কেউ বেশি জানবে না। আর তা থেকে গাড়ির সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটবে। আগমন ঘটবে কনসেপ্ট কারের সাহসী ব্যবহারিক ও অন্যান্য ধ্যান-ধারণা চালু করতে এগুলো নির্মিত হবে। আরও কথা হলো প্রায় সব কনসেপ্টের শিকড় এমন প্রযুক্তির মধ্যে নিহিত যেগুলো আজ ইতোমধ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে। স্টার্ট আপ হোক আর নিগেসি অটোমেকারই হোক সবাই এখন গাড়ির ভেতর কৃত্রিম বুদ্ধি ও বড় বড় ড্যাটার প্রয়োগ পরীক্ষা করে দেখছে এবং এসব ব্যবস্থাকে টেলিফোন, ঘরোয়া সরঞ্জাম এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অন্যান্য ইন্টারনেট যুক্ত ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে। চালকরা টয়োটার কনসেপ্ট-আই-কারের দিকে এগিয়ে এলে গাড়ির দরজায় ‘হ্যালো’ লেখা দেখতে পাবেন। এটা হলে ইউই নামের কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন বটের সম্ভাষণ। ভেতরে ঢুকলে গাড়িটি কিছু ড্যাটা বা তথ্য নেবে যেমন চোখের মণির ডাইলেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ও ভোকাল টোন। এগুলো নেয়া হবে চালকের আবেগগত অবস্থা মূল্যায়নের জন্য এবং গাড়িটিকে তার মনমেজাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য। ইউই আগে থেকে মিউজিক, তাপমাত্রা, সিটের অবস্থা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত অগ্রাধিকারগুলো জানতে পারলে ড্রাইভার উঠে বসার আগেই সেটিংগুলো আপনা থেকে এডজাস্ট করে নেবে। হোন্ডা সম্প্রতি তার নতুন কনসেপ্ট কার উন্মোচন করেছে নাম এনইইউ ভি। এর কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন এ্যাসিস্টেন্ট চালকের টেলিফোন সংলাপ শুনে রি প্ল্যান নির্ধারণ করে। চালক যদি মিটিংয়ে যেতে দেরি করে ফেলে সেক্ষেত্রে গাড়ি নিজেই সবচেয়ে দ্রুত কিভাবে সেখানে পৌঁছানো যায় সেই পথ নির্ধারণ করে ফেলে। আর যদি ব্যয় করার মতো সময় পাওয়া যায় তাহলে পথে ক্ষণিকের জন্য থেমে কফি খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে। এর পেছনে গোটা দর্শনটা হলো আগের চেয়ে বেশি আবেগগত মানবিক যোগসূত্র সৃষ্টি করা। অটো শিল্প হয়ত ফোন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সূত্র খুঁজে নিয়েছে। স্মার্টফোনগুলো আজ ব্যক্তিগত লাইফলাইনে রূপান্তরিত হয়েছে যা মানুষের মিথষ্ক্রিয়াকে সুগম করে তোলে, মানুষের জীবনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যকর করে এবং মূল্যবান তথ্য সংরক্ষিত করে। এই গাড়িগুলোরও একদিন একই ধরনের ক্ষমতা থাকবে এমন বিষয়টি আজ অতি স্বাভাবিক বলে মনে হয়। বহু বছর ধরে গাড়ির ডিজাইনে গাড়ির মেকানিক্স ও উৎপাদনের ওপর প্রকৃত দৃষ্টিনিবদ্ধ করা থাকত। চালকের অভিজ্ঞতটিকে গৌণ বিষয় বলে গণ্য করা হতো। গাড়িটিকে ভাল হতে, নিরাপদ হতে ও আরামদায়ক হতে হবে ঠিক আছে। কিন্তু চালকের সঙ্গে গাড়ির যে একটা মিথষ্ক্রিয়ার ব্যাপার আছে সেটা ছিল নিতান্তই ভাসাভাসা ব্যাপার। আজ আইটি এবং এআই প্রযুক্তির বদৌলতে সেই মিথষ্ক্রিয়া সম্ভব হয়েছে। এর ফলেই ফোর্ড গাড়ির চালকরা যারা এ্যামাজন ইকো ব্যবহার করে থাকে তারা বটের ভয়েস এ্যাসিস্টেন্ট এলেক্সাকে তার গাড়িটা রিমোটের দ্বারা চালান শুরু করতে বলতে পারবে। অনুবাদ: এনামুল হক সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×