ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সালেহা চৌধুরী

গন্ধচুরি

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

গন্ধচুরি

অনেকদিন আগে বাগদাদে একটি মজার ঘটনা হয়েছিল। এবার সেই ঘটনার কথা তোমাদের বলছি। একজন ভয়ানক ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক পথ চলছে। তার কাছে একটা পয়সাও ছিল না যা দিয়ে ও কিছু কিনে খেতে পারে। খুব বেশিদূর যাবার মতো ওর অবস্থা নয়। একটা কিছু ওকে খেতেই হবে। দেখে একটা খাবারের দোকান। নানা কিছু রান্না হচ্ছে সেখানে। ওকে দেখেই দুর দুর করে তাড়িয়ে দিল দোকানদার। বলে- ভাগো। এসব খাবার তোমার জন্য নয়। তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাও না হলে বিপদ হবে। ও দোকান থেকে বের হতে যাবে দেখে বড় এক কড়াই খাসির মাংস রান্না করে সেখানে এনে রাখা হয়েছে। তারপাশে পোলাও। গরম খাবারের গন্ধে বাতাস ভারি। মসলা-ঘিয়ের গন্ধ এত চমৎকার ভিখারি তখন যেতে পারে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নেয়। মনে হয় সেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে সেই অপূর্ব সুন্দর খাবারের গন্ধ ওর পেটে চলে গেছে। ও দাঁড়িয়ে আর একবার জোরে নিঃশ্বাস নিতে যায়। তখন দোকানদার সেখানে এসে প্রশ্ন করেÑ কী করছ তুমি। কিছু না হুজুর আমি এমনি দাঁড়িয়ে আছি। এমনি দাঁড়িয়ে আছ? আমি জানি তুমি কী করছ। কিছু করছি না। কেবল দাঁড়িয়ে আছি। করুণ গলায় ভিখারি বলে। তুমি দাঁড়িয়ে আমার খাবারের গন্ধ চুরি করছো। জোরে জোরে শ্বাস টেনে এই খাবারের গন্ধ তোমার পেটে নিয়ে নিয়েছ। সত্যি কিনা বল। ভিখারি বলেÑ আমার খুব খিদে পেয়েছে। হয়ত এই গন্ধ আমার ভাল লেগেছে। তাই ...। বললেই হবে? তুমি আমার খাবারের গন্ধ চুরি করেছো। এই গন্ধ চুরির জন্য তোমাকে টাকা দিতে হবে। আমার কোন টাকা নেই হুজুর। আমি এর বিচার চাইব কাজীর কাছে। টাকা নেই বললে আর আমি তোমাকে মাপ করে দিলাম। দোকানি এবার কাজীর কাছে গিয়ে নালিশ করে। কাজী ভিখারিকে ডেকে পাঠায়। বলেÑ তুমি ওর খাবারের গন্ধ শুঁকেছ। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ভিখারি বলেÑ জ্বি হুজুর। দোকানদার টাকা চাইছে। তোমার টাকা আছে? জ্বি না হুজুর। আমার কোন টাকা নেই। তবে আমি তো কোন খাবার খাইনি। কেবল গন্ধ শুঁকেছি। তোমার টাকা নেই? ঠিক তাই। টাকা নেই। আমি গরিব ভিখারি। কাজি বলেনÑ শুনতে পাচ্ছেন ওর কোন টাকা নেই। আপনি কী ওকে মাপ করবেন? না। আমি টাকা চাই। রেগে দোকানি বলে। Ñআমার খাবারের গন্ধ ও নাক দিয়ে টেনে নেবে এমনি এমনি? এ হতেই পারে না। কাজী বলেনÑ দোকানদার সাহেব আপনি আমার খুব কাছে আসেন। একেবারে কাছে। দোকানি তখন কাজির সামনে যায়। কাজি তখন কী করেন? একটা কাপড়ের পোটলায় কিছু কাঁচা টাকা ভরে দোকানদারের কানের কাছে বাজায়। ঝুন ঝুন ঝুন ঝুন টাকার শব্দ। বলেন হাকিমÑ দোকানদার সাহেব আপনি কী শুনেছেন টাকার শব্দ? জ্বি হুজুর। আপনি ন্যায় বিচারক। জানি আমি আপনার কাছে সুবিচার পাব। এরপর আপনি টাকাগুলো আমাকে দেবেন। তাই না? আমি সুবিচারক এটা আপনি বিশ্বাস করেন? জ্বি হুজুর। ও গরিব ভিখারি। ওর টাকা নেই। ও দোষী। আপনার খাবারের গন্ধ চুরি করেছে। এবার আপনি বলুন আমি যে আপনার কানের কাছে টাকার শব্দ করেছিলাম সে শব্দ আপনি শুনেছেন? মানে আপনার কান কী সে শব্দ শুনেছে? জ্বি হুজুর। ঠুন ঠুন ঝুন ঝুন কী মিষ্টি শব্দ। আহা টাকার শব্দের মত আর কোন শব্দ হতেই পারে না। এবার তাহলে আপনি আসুন। আপনার কান টাকার শব্দ শুনেছে এরপর তো আপনার খাবারের গন্ধের দাম পেয়ে গেছেন। ওর নাক খাবারের গন্ধ শুঁকেছিল আর আপনার কান টাকার শব্দ শুনেছে। এরপর আর কী চান আপনি। লাকটা আর কোন কথা না বলে চুপচাপ চলে যাবে বলে ঠিক করে। ভিখারিকে যদি খাবারের গন্ধ শোঁকার জন্য দাম দিতে বলা হয় তাহলে দোকানির কানের কাছে ঝুন ঝুন ঠুন ঠুন টাকার শব্দই তার দাম। কাজী বলেনÑ চলে যান। আপনি গন্ধ শোঁকার দাম পেয়ে গেছেন। আর কী চান? এই কে আছ ওকে আমার সামনে থেকে বের করে দাও। ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার টাকার শব্দ শুনতে চায়। অলঙ্করণ : আইয়ুব আল আমিন
×