ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের স্বীকৃতি চায় কুমাররা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

শিল্পের স্বীকৃতি চায় কুমাররা

বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে আদিকাল থেকে জড়িয়ে আছে মাটির তৈরি তৈজসপত্র। কুমার বা পাল সম্প্রদায়ের মাটির তৈরি হরেকরকম সামগ্রী তৈরি করে বলেই তাদের বলা হয় মৃৎশিল্পী। আদিকাল থেকে মৃৎশিল্পীরা মাটি দিয়ে হাঁড়ি, পাতিল, সরা, ঢাকনা, থালা, বদনা, ঢোকসা, সড়ই, কলসি, ডাবর, ফুলের টব, ব্যাংক, খেলনা, পুতুল, মূর্তি, কুয়ার পাট ইত্যাদি তৈরি করে আসছে। তাদের তৈরি সামগ্রী গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে ব্যবহার হয়ে আসছে আদিকাল থেকে। এখনও এসব মাটির তৈরি সামগ্রী গ্রামীণ মেলাতে বেচা-কেনা হয়। তবে সরকারের স্বীকৃত শিল্প হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় এবং বর্তমানের এই প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইনের যুগে এসে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এরপরেও মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা এখনও রয়েছে। আর সে চাহিদা পূরণ করছে মৃৎশিল্পীরা। যদিও কর্মসংস্থানের অভাব, সামাজিক অবহেলা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাল বা কুমার সম্প্রদায়ের অনেকে জাত ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। মৃৎশিল্পটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের স্বীকৃতি না পাওয়ায় এ সম্প্রদায়ের মানুষ সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন কথা বললেন নওগাঁ শহরের আরজী-নওগাঁ পালপাড়ার গৌর চন্দ্র পাল, ইলা রানী পাল, রানু বালা পাল, অষ্টগোপাল পাল ও উর্মিলা পাল। এরা সবাই মৃৎশিল্পী। গৌর মাটির প্রতিমা তৈরি করেন, উর্মিলা দইয়ের হাঁড়ি, ইলা পিঠা তৈরির সরা-ঢাকনা, গোপাল মাটির ব্যাংক, পুতুল, রানু বালা পুজোর ঘট আর অষ্টগোপাল তৈরি করেন মাটির হাঁড়ি-পাতিল, টব ইত্যাদি। ওই পাড়ায় দেখা যায়, ইলা রানী ঘরে বসে পিঠা তৈরির সরা-ঢাকনা তৈরি করছেন। তাদের একমাত্র ছেলে কনক এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠল। ঘরে বসে মাটির তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে সংসারে তিনি স্বামীকে সহযোগিতা করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে তাদের মাটি কিনে এসব সামগ্রী তৈরি করতে হয়। কেউ মাটি দিতে চায় না। সময় ও পরিশ্রম তো আছেই। এতে সামান্য আয়ে কোনভাবে সংসার চলে। বাইরের উঠানে বসে পুজোর ঘট তৈরি করছিলেন বৃদ্ধা রানুবালা পাল। স্বামী নগেন পাল অনেক আগে মারা গেছেন। এখনও তিনি দিনে এক শ’টি ঘট তৈরি করেন। এসব ঘট তিন টাকা করে বিক্রি করেন। মাটি, জ্বালানি কাঠ, গুঁড়া, ইত্যাদি কিনে তৈরি করতে হয়। পারিশ্রমিক ধরলে তৈরির খরচই ওঠে না। পাশেই বসে দইয়ের হাঁড়ি তৈরি করছিলেন উর্মিলা পাল। প্রায় ২৫ বছর থেকে তিনি স্বামীর সংসারে এই মাটির সামগ্রী তৈরি করে সংসারে সহযোগিতা করছেন। তাদের মতে মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা এখন কমে গেছে। তারপরেও শীত মৌসুমে পিঠা তৈরিতে মাটির তৈরি সরা-ঢাকনা লাগে। এ সময় কুমারদের বেশ ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। কনকনে শীত উপেক্ষা করে ঠা-া কাদা-মাটি দিয়ে এসব তৈজসপত্র তৈরি করতে হয়। কুমারদের দাবি, সরকারীভাবে মৃৎশিল্পকে স্বীকৃতি দিয়ে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে তারা কিছুটা হলেও সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারে। অন্য কুটির শিল্পের মতো এই শিল্পেও ঋণ দেয়া হলে তারা ভালভাবে অন্তত চলতে পারত। Ñবিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×