ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তি দিতে পারে বিশ্বমান

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

প্রযুক্তি দিতে পারে বিশ্বমান

গাইবান্ধার কুম্ভকাররা মাটির নানা শোপিচ, বাসনপত্রের মধ্যে কলস, হাঁড়ি, মাটির ব্যাংক, বাটনা, সরা, থালা, পাতকুয়ার পাটসহ খেলনা তৈরি করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু সম্প্রতি প্লাস্টিক, সিলভারের বাসনপত্র ও খেলনার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সঙ্গত কারণে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে। ফলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে পৈত্রিক পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঙালীর নিজস্ব কৃষ্টি ও গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চারু-কারু“ও মৃৎশিল্প। এর সঙ্গে জীবন জীবিকা জড়িয়ে এখনও গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে বিরুদ্ধ পরিবেশে নিজ পেশাকে আঁকড়ে টিকে আছে কুম্ভকার পরিবার। বিশেষ করে শীতকালের এই শুকনো মৌসুমে কুম্ভকাররা মাটির তৈরি জিনিসপত্র বানানোর দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারণ এ সময়ে বৃষ্টি না থাকায় মাটির তৈরি জিনিস বানিয়ে রং করতে, শুকাতে এবং ভাটি দিয়ে পোড়াতে সমস্যা হয় না। সেজন্য এই মৌসুমে জিনিসপত্র বানিয়ে মজুদ করে রাখে। আবার অনেক সময় পাইকারি ক্রেতারা এসেও তাদের কাছ থেকে ওইসব জিনিস কিনে নিয়ে যায়। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ও খোলাহাটি ইউনিয়নের পালপাড়া, শিবপুর, কলাকোপা, ধুতিচোরা, ফুলছড়ির রসুলপুর, কঞ্চিপাড়া, ভাষারপাড়া, সাঘাটার ঝাড়াবর্ষা, পুঁটিমারী, সুন্দরগঞ্জের বেলকা, পাঁচপীর, ধুবনী, চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর, ধর্মপুর, সাদুল্যাপুরের রসুলপুর, দামোদরপুর, পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর, আরজিশাহপুর ও শক্তিপুর এবং পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী এখনও মাটির তৈজসপত্র ও খেলনার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এসব গ্রামের সাড়ে সাত শ’ পরিবার এখনও এই পেশায় নিয়োজিত। মূলত বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ যে মেলা হয়, সেসব মেলায় এসব খেলনাসহ মাটির জিনিসপত্র বেচাকেনা হয়। সে কারণে তাদের পণ্যের বেচাকেনার ভরা মৌসুম হচ্ছে ফাল্গুনÑজ্যৈষ্ঠ চার মাস এবং আশ্বিন, অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ এই চার মাস। অন্য সময়ে এসব জিনিষের চাহিদা কম থাকে। খেলনা ও মাটির জিনিসের কারিগর কুম্ভকাররা অর্থাভাবে চাহিদা মোতাবেক পণ্য মজুদ রাখতে পারে না বলে তারা তাদের চিরায়ত অভাব থেকে মুক্ত হতে পারে না। একই কারণে উন্নতমানের রং, মাটি পোড়ানোর জ্বালানি কাঠসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে না পারায় তারা উন্নতমানের খেলনা তৈরি করতে পারছে না। সেজন্য মাটির শোপিচ, বাসনপত্র এবং খেলনা তৈরি ও রং দেয়ায় তাদের উন্নত প্রযুক্তি এবং রং ব্যবহারের কৌশল বিষয়ে সরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে কুম্ভকাররা বলেন এতে তারা মাটি দিয়ে অনেক উন্নতমানের এবং আকর্ষণীয় জিনিস তৈরি করতে পারবেন। এতে আদি শিল্পকর্মটি এবং তাদের কারিগররা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে জীবন জীবিকায় টিকে থাকতে পারবে। Ñআবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে
×