লাখ লাখ সমর্থকের ঢল নেমেছে ওয়াশিংটনে, সেই সঙ্গে আসছেন প্রতিবাদীরা। উপলক্ষ, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন গত বছরের নির্বাচনে বিশ্বকে চমকে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয়া রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নিউইয়র্কের এ ধনকুবের স্থলাভিষিক্ত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান বারাক ওবামার।
কিভাবে ট্রাম্পের অভিষেক? এক প্রতিবেদনে তার বিস্তারিত তুলে ধরেছে বিবিসি।
প্রেসিডেন্টের অভিষেক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী চার বছর পরপর জানুয়ারির ২০ তারিখ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
১৯৩৩ সালের আগে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক হতো সাধারণত ৪ মার্চ; কিন্তু ওই বছর ২০তম সংশোধনী কার্যকর হওয়ায় নির্বাচনের পর শপথের অপেক্ষা কমিয়ে আনা হয়।
নতুন প্রেসিডেন্টের শপথকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উদযাপন শুরু একদিন আগেই ॥ শুক্রবার শপথ হলেও ট্রাম্পের অভিষেক উদযাপনের আয়োজন শুরু হয়েছে আগের দিন থেকে।
* বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ওয়াশিংটন ডিসির লিংকন মেমোরিয়ালে শুরু হয় দিনব্যাপী কনসার্ট। ওয়াশিংটন ডিসি ফায়ার ডিপার্টমেন্টের এমারেল্ড সোসাইটি পাইপস এ্যান্ড ড্রামস, রিপাবলিকান হিন্দু কোয়ালিশন ও হাই স্কুল মার্চিং ব্যান্ড সকালের পার্বে অংশ নেয়।
* বিকেল সাড়ে ৩টায় হবু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স আর্লিংটনে জাতীয় সমাধিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
* বিকেল ৪টায় লিংকন মেমোরিয়াল কনসার্টের দ্বিতীয় ভাগে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। তার আগে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী টবি কিথ ও লি গ্রিনউড।
* ট্রাম্পের শপথ নেয়ার আগের রাতটি কাটে হোয়াইট হাউসের খুব কাছে, প্রেসিডেন্টের অতিথি ভবন ব্লেয়ার হাউসে।
২০ জানুয়ারি ॥ * বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার দিনটি ট্রাম্প শুরু করেন হোয়াইট হাউসের কাছে সেন্ট জনস এপিসকোপাল চার্চে সকালের প্রার্থনায় অংশ নিয়ে।
* এরপর ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া যান হোয়াইট হাউসে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিদায়ী ফার্স্টলেডি মিশেলের সঙ্গে কফি খেতে।
* এরপর মোটর শোভাযাত্রা করে নতুন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডি ক্যাপিটলে আসেন। ওবামা ও মিশেল তাদের সঙ্গ দেন।
* ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম ভাগে হয় নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ। নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, রাজনীতিবিদ, কংগ্রেসের সদস্য ও দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকেন।
* সকাল সাড়ে ৯টায় সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা।
* সাড়ে ১১টায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের শপথ পড়ান বিচারপতি ক্লেরেন্স টমাস। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের বাইবেল হাতে নিয়ে পেন্স শপথবাক্য পাঠ করেন।
* দুপুর ১২টায় প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস নতুন প্রেসিডেন্টকে শপথ পড়ান। এ সময় ট্রাম্পের হাতে থাকে আব্রাহাম লিংকনের স্মৃতিধন্য বাইবেল। শপথ নেয়ার পর অভিষেক বক্তৃতা দেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
* বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ট্রাম্প ও পেন্স পেনসিলভানিয়া এভিনিউয়ে প্যারেডে অংশ নেন। তাদের অনুসরণ করবেন সমর্থকরা। ট্রাম্পবিরোধীরাও প্রতিবাদ জানাতে সেখানে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন।
* সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে স্ত্রীদের নিয়ে তিনটি আলাদা অভিষেক বলে যোগ দেন ট্রাম্প ও পেন্স। শনিবার সকাল ১০টায় ট্রাম্প ও পেন্স ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে প্রার্থনা সভায় যোগ দেবেন।
ওই সময়েই ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধীদের প্রতিবাদ কর্মসূচী উইমেনস মার্চ শুরু হওয়ার কথা।
শপথ অনুষ্ঠান বর্জন ॥ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা ও কংগ্রেসম্যান জন লুইসের সঙ্গে বাদানুবাদের সূত্র ধরে অর্ধশতাধিক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন।
অনেক কংগ্রেস সদস্য শপথে না গিয়ে পরদিন দুই লাখ নারীর বিক্ষোভ কর্মসূচীতে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিবাদ কী নিয়ে ॥ শপথ ঘিরে ট্রাম্প সমর্থক ও বিরোধীরা সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ওয়াশিংটনে জড়ো হতে শুরু করেন। নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদে বর্ণ ও লৈঙ্গিক সমতা, সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভপাতের অধিকার, অভিবাসী ও ভোটের অধিকারের দাবিতে বিরোধীরা রাজধানীতে বড় ধরনের কর্মসূচীর পরিকল্পনা করেছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা গ্রীন পার্টির জিল স্টেইন ও তার সমর্থকরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী ও পরমাণু অস্ত্রবিরোধী র্যালি করবে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
কেমন হবে ট্রাম্পের উদযাপন? ॥ অভিষেকের দুই দিনের অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য ট্রাম্প নিজেই মর্মন টাবেরনাকল কয়ার, রেডিও সিটি রকেটস, থ্রি ডোরস ডাউন ও শিল্পী জ্যাকি ইভাঙ্কোর নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।
অস্কারজয়ী অভিনেতা জন ভয়েট লিংকন মেমোরিয়ালে ট্রাম্পের অভিষেক কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন। তবে খ্যাতিমান শিল্পীদের অনেকেই ট্রাম্পের অভিষেকে পরিবেশনার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। ব্রিটিশ শিল্পী এলটন জন, ওয়েলশের শার্লট চার্চ এবং আমেরিকান ডিজে মবি অভিষেকে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। ব্রডওয়ের তারকা জেনিফার হলিডে জানিয়েছেন, সমকামীদের অধিকারের প্রশ্নে ট্রাম্পের অবস্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানাতে তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। বি স্ট্রিট ব্যান্ড জানিয়েছে, তারা তাদের ‘বস’ ব্রুস স্প্রিংসটিনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ট্রাম্পের অভিষেকে যাবে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: