ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গৌতম সাহা-তালগাছ রোপণই যার নেশা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

গৌতম সাহা-তালগাছ রোপণই যার নেশা

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘তাল গাছ’ কবিতায় শিশুকালে আমরা প্রায় সকলেই পড়েছি, ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে।’ কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই তাল গাছ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এর মাঝেও কিছু উৎসাহী প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ এই তাল গাছ লাগিয়ে বিভিন্ন রাস্তার দুই ধারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শোভাবর্ধন কল্পে কাজ করে গেছেন বা যাচ্ছেন। তেমনী নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগরের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘু ডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় এক কিমি. রাস্তার দুই ধারে শত শত তাল গাছ দাঁড়িয়ে প্রকৃতি প্রেমীদের হাতছানি দিচ্ছে। সেই আশির দশকে উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বর্তমান নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি গাছগুলো রোপণ করেছিলেন। আজ সেই তাল গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট লম্বা হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে রাস্তার দুই ধারে শোভাবর্ধন করে আসছে। এদিকে সাধন চন্দ্র মজুমদারের তালগাছ লাগানো এবং বর্তমানে রাস্তার দুই পাশে শোভাবর্ধন করায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গত প্রায় ৫ বছর আগে থেকে পোরশা উপজেলার মশিদপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান গৌতম কুমার সাহা চরমভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন। যদিও শিশুকাল থেকেই বিভিন্ন গাছ রোপণ করাই ছিল তার নেশা। বর্তমানে পেশায় তিনি একজন কৃষক। বর্তমানে পরিবারের দেখাশুনা, সমাজ সেবা ও তালাগাছ রোপণ আর পরিচর্যা করেই দিন কাটান তিনি। এজন্যই এলাকায় গিয়ে তালগাছের কথা বললেই একবাক্যে সকলেই গৌতমের কথাই বলে। সরজমিনে তার গ্রামে গিয়ে কথা হয় গৌতমের সঙ্গে। প্রথমেই ভবানীপুর রাস্তার পাশে তার লাগানো তাল গাছগুলো দেখান তিনি। গৌতম জানান, তালগাছ যখন বিলুপ্তির পথে তখন হঠাৎ করেই বছর পাঁচেক আগে রাস্তার পাশে ও সরকারী খাস পতিত জমিতে তার ইচ্ছা হয় তালগাছ লাগানোর। এতে জনগণের যেমন উপকার হবে, তেমনই দেশেরও উন্নয়ন হবে। কথাগুলো মাথায় রেখে নিজ উদ্যোগে লেগে যান তালগাছ রোপণ করতে। এ পর্যন্ত তিনি ১৫ হাজার তালগাছ রোপণ করেছেন বলে জানান। তিনি জানান, প্রতিটি তালবীজ (তালের আঁটি) ৫০ পয়সা দামে কিনে নিয়ে এবং কিছু বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে মশিদপুর ইউনিয়নের সুড়িপুকুর থেকে ছাতোয়া ৯ কিমি., কোলাপাড়া-ভবানীপুর হয়ে শরিয়ালা ৩ কিমি. রাস্তার পাশে এবং শিশা-মাটিন্দর খাড়ির পাশে প্রায় ৫ কিমি. জুড়ে তালগাছ রোপণ করেছেন। তিনি নিজেই এগুলোর পরিচর্যা করেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, তালগাছগুলো বড় হলে কি হবে জানি না। কিন্তু তিনি বেঁচে থাকা পর্যন্ত রোপণ করেই যাবেন। শুধু তার ইউনিয়নেই নয় ভবিষ্যতে গোটা উপজেলায় তালগাছ রোপণের কথা চিন্তা করছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ, পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন।
×