ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘটছে দুর্ঘটনা

যশোরে যত্রতত্র চাঁদা আদায়

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

যশোরে যত্রতত্র চাঁদা আদায়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে বিভিন্ন মহাসড়কের ওপর যানবাহন থামিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে টোল আদায়ের কারণে যাতায়াত ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। আদায়কারীরা হঠাৎ করে থামিয়ে দেয় তাদের লক্ষ্যের বাহন। এতে পেছনের বাহনটিও থামিয়ে দিতে হয়। এভাবে ব্যস্ততম মহাসড়কে তৈরি হয় যানজট। আবার দাঁড়িয়ে থাকা বাহনকে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে বিপরীত পাশের বাহনকে দেখতে না পাওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি যশোর শহরতলীর শানতলায় একটি টোল ঘরের সামনে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তিনজনের। যশোর শহরে ঢোকার মুখে যশোর জেলা মোটর ওয়ার্কার্স এ্যাসোসিয়েশন এবং পৌরসভার নামে শহরতলীর ৭টি পয়েন্ট থেকে চাঁদা ও টোল নেয়া হচ্ছে। মোটর ওয়ার্কার্স এ্যাসোসিয়েশনের নামে যশোর-খুলনা মহাসড়কের রাজারহাট আমিন পেট্রোলিয়ামের সামনে, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চূড়ামনকাঠি বাজার এবং যশোর-মাগুরা মহাসড়কের উপশহর ট্রাক টার্মিনালের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। আর পৌরসভার নামে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পুলেরহাট, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের শানতলা পেপসি কোম্পানির সামনে, যশোর-মাগুরা মহাসড়কের উপশহর রজনীগন্ধা ফিলিং স্টেশনের সামনে এবং যশোর-খুলনা মহাসড়কের মুড়লী এলাকায় টোল নেয়া হয়। এ সাতটি স্থানই শহর লাগোয়া হওয়ায় অত্যন্ত ব্যস্তময়। বাস, ট্রাকের পাশাপাশি চলাচল করে খুদে যানবাহন অটো, রিক্সা, ভ্যান ও মোটর এবং বাইসাইকেল। চাঁদা আদায়কারীরা কোন নিয়মনীতি না মেনে হঠাৎ করে এক একটি ট্রাক দাঁড় করিয়ে দেয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রাক থামিয়ে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন এবং তা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও দৃশ্যত বন্ধ হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কের রাজারহাট আমিন পেট্র্রোলিয়ামের সামনের স্থানটি ব্যস্ততম। ওই স্থান দিয়ে শুধু খুলনা থেকে নয়, সাতক্ষীরা থেকে শত শত ট্রাক দিন-রাত যাতায়াত করে থাকে। প্রত্যেক ছোট ট্রাক থেকে ২০ টাকা এবং বড় ট্রাক থেকে ৩০ টাকা আদায় করা হয়। প্রতিদিন চাঁদা নেয়ার সময় সেখানে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। ছোট যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়ে খাদেও পড়ে যায়। একই অবস্থা উপশহর ট্রাক টার্মিনাল এবং পুলেরহাটে। যশোর-ঝিনাইদহ সড়কটিও অন্যান্য সড়কের মতো ব্যস্ততম। এই সড়কের শানতলা পেপসি কোম্পানির সামনে টোল ঘর বসিয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এর ফলে কখনও কখনও সেনানিবাসের পাশের ওই সড়কটিতে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ জটের কারণে গত ১৫ জানুয়ারি একটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ওই এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন। একটি যাত্রীবাহী বাস এবং একটি অটোরিক্সার সংঘর্ষের ফলে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। পঙ্গু হয়ে গেছে আরও ৬/৭ জন। ওই এলাকায় বসবাসকারীদের অভিযোগ, ঘটনার দিন ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের কারণে শানতলায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সকালে চৌগাছার নিমতলা থেকে একটি অটোরিক্সা যশোর অভিমুখে আসে এবং যশোর থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস (যশোর-ব-৮৪৯) চৌগাছার দিকে যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শানতলা পেপসি কোম্পানির কাছে পৌঁছলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। বাসচালক ও অটোরিকশা চালক দূর থেকে যদি পরস্পরকে দেখতে পেতেন তাহলে ওই দুর্ঘটনা ঘটত না। ওই এলাকায় ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের কারণে ওভারটেক করতে গিয়ে বাসচালকের সামনের দিকের নজর এড়িয়ে যায় এবং অটোরিক্সায় গিয়ে আঘাত হানে। যদিও এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হিমেল হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে জেলা মোটর ওয়ার্কার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্তাজ আলী জানিয়েছেন, ফেডারশনের অনুমতি নিয়ে স্লিপ দিয়ে টাক নেয়া হয়। এটা সাধারণ শ্রমিকের স্বার্থে। তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ট্রাক শ্রমিকরা টাকা নিয়ে থাকে। শ্রমিকের কল্যাণে সংগঠন ওই অর্থ ব্যয় করে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদ আবু সরোয়ার বলেন, রাস্তার পাশে টোলঘর তৈরি করে অর্থ আদায়ের বিষয়টি বন্ধে প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিক হতে হবে। ওই টোলঘর বা চাঁদা আদায়কালে যদি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে এর দায় সকলের আছে। এর আগেও ওই স্থানে এক পুলিশ সদস্য দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেটি জোরালোভাবে উত্থাপন করা যেতে পারে। ওই কমিটিতে প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকেন।
×