ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বাইশ গজে পুনর্জন্ম!

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

এবার বাইশ গজে পুনর্জন্ম!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যুবরাজের জীবনী নিয়ে দারুণ একটা সিনেমা হতে পারে, যার প্রতিটি দৃশ্যে থাকবে টানটান উত্তেজনা; উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতা, মৃত্যুকে জয় করে ফেরা ...। মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে যা দেখেছেন, যা করেছেন, সেটি কম মানুষের জীবনেই হয়ে থাকে। তিন বছর পর এবার যখন ইংল্যান্ড সিরিজের ওয়ানডে দলে ডাক পেলেন, অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, নিন্দুকেরা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন, ভুলে গেছেন এই মানুষটাই দীর্ঘ আটাশ বছর পর তাদের বিশ্বকাপ (২০১১) উপহার দিয়েছিলেন। কটকের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৫০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস উপহার দেয়ার পর অনেক প্রশ্নের ভিড়ে দুটি প্রশ্ন আলাদা করে রাখতে হয়। এটাই কি আপনার সেরা ইনিংস, অথবা, এই সেঞ্চুরিতে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? ‘হয়ত এটাই জীবনের সেরা ইনিংস। সত্যি বলতে, অন্যের কাছে নয়, নিজের কাছেই নিজেকে প্রমাণ করার সময় এসেছিল। কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে যখন নিজে বলতাম, যুবি তুমি ফুরিয়ে যাওনি।’ উত্তর যুবরাজের। বহস্পতিবার বারবাতি স্টেডিয়ামে ভারত তো বটেই, গোটা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকেই নষ্টালজিয়ায় ভুগিয়েছেন যুবরাজ ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২৫ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর চতুর্থ উইকেটে দু’জনের ২৫৬ রানের জুটি। যুবরাজ ১২৭ বলে ১৫০ (২১ চার, ৩ ছক্কা), ধোনি ১২২ বলে ১৩৪ (১০ চার, ৬ ছক্কা)। ভারত ৬ উইকেটে ৩৮১। প্রত্যাবর্তনে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস যুবরাজের (১৪তম সেঞ্চুরি)। নেতৃত্ব ছাড়ার পর ম্যারাথন ধোনি, তিন ভার্সনে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম মিশনেই এক ম্যাচ হাতে রেখে কোহলির সিরিজ জয়। অনেক অনেক রেকর্ড। আলোচনার শেষ নেই। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে যুবরাজের ইনিংস। ক্যান্সার জয় করে বেঁচে থাকাই যেখানে বড় কথা, সেখানে ৩৫ বছর বয়সে বাইশ গজে পুনর্জন্ম। স্রেফ অবিশ্বাস্য। ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পর ডাক্তার সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘জানি না সে আর কখনও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরতে পারবে কি না।’ যুবরাজ ফিরেছেন, সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে, একেবারে রাজার বেশে। ষোলো বছরের ক্যারিয়ারে ব্যাটে-বলে দারুণ সব মুহূর্ত রয়েছে, ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপে এক ওভারে ছয় ছক্কা, ২০১১’র টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারসহ আরও অনেক। তবু এই সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য অন্যরকম, ‘হয়ত এটাই আমার সেরা ইনিংস। শেষ সেঞ্চুরি করেছি সেই ২০১১ বিশ্বকাপে। দ্রুত তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আমরা একটা পার্টনারশিপ করতে চেয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে। অন্যপ্রান্তে মাহী (ধোনি) ছিল, যার সঙ্গে আমার অনেক জুটির ইতিহাস রয়েছে। সে যখন ক্যাপ্টেন ছিল না, তখন এভাবে মন খুলে ব্যাট করত। এটা দারুণ অনুভূতি। বিশ্বাস ছিল আমরা দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে পারব।’ শরীরটাকে ২৫ বছরের টগবগে যুবকের মতো ঝরঝরে করে তুলতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন যুবরাজ। ধন্যবাদ দিয়েছেন বাবা-মা, সদ্য বিবাহিত স্ত্রী-পরিবার, ভারতীয় কোচ-নির্বাচক, ভক্ত-অনুরাগী সবাইকে।
×