ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ফুটবল দল দুই গ্রুপে, ক্যাম্প পেছাল দু’দিন, কোটানেরই কোচ হবার সম্ভাবনা বেশি

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ নয়, মূল লক্ষ্য সাফ ফুটবল

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ নয়, মূল লক্ষ্য সাফ ফুটবল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এ বছর দুটি বড় টুর্নামেন্টে অংশ নেবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। মার্চে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের চতুর্থ আসর। ডিসেম্বরে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের (সাফ সুজুকি কাপ) দ্বাদশ আসর। দুটোই অনুষ্ঠিত হবে ঘরের মাটিতে। তবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ নয়, বাংলাদেশ দলের মূল লক্ষ্য ও দৃষ্টি থাকবে ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের দিকেই। কেননা, গুরুত্বের বিচারে সাফ ফুটবলের মাহাত্ম্যই বেশি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই আসরের শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে পারছে না বেঙ্গল টাইগাররা। সর্বশেষ সেই ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাল-সবুজরা। সেটাই প্রথম এবং সেটাই শেষ। এরপর আরও পাঁচটি আসর চলে গেছে, সেগুলোতে মাত্র একটিতে রানার্সআপ হলেও বাকি আসরগুলোতে ফাইনালেই উঠতে পারেনি (এ পর্যন্ত সাফ ফুটবল আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১ বার। ২০০৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। রানার্সআপ হয় ১৯৯৯ এবং ২০০৫ সালে। সেমিফাইনালিস্ট ছিল ১৯৯৫ এবং ২০০৯ সালে। বাকি ছয় আসরে প্রতিবারই বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকে)। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সাফের স্বাগতিক যাচ্ছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান বলে, স্বাগতিক হলে বাংলাদেশ ভাল ফল করে। ২০০৩ সালে শিরোপা জেতে এবং ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল খেলে। এবার আবারও স্বাগতিক হবে বাংলাদেশ। ফলে ফুটবলপ্রেমীরা কিছুটা হলেও আশায় বুক বাঁধছেন। যদিও ‘ভুটান-লজ্জা’র পর বলতে গেলে তলানিতেই চলে গেছে বাংলাদেশের ফুটবল। র‌্যাঙ্কিংয়েও নিজেদের ইতিহাসের নিকৃষ্ট অবস্থানে (১৯০) আছে তারা। তারপরও স্বাগতিক বিধায় সাফের শিরোপা জয়ে সবরকম আয়োজন ও চেষ্টা করে যাচ্ছে বাফুফে। সেই লক্ষ্যেই বছরের প্রারম্ভেই পরিকল্পনা অনুসারে অগ্রসর হচ্ছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাফে সাফল্য পেলে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের বিদায় বেলাটা হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর এ জন্যই এবার ৬২ ফুটবলার নিয়ে এক ফিটনেস ক্যাম্প ডেকেছে বাফুফে। তালিকায় আছে নতুন-পুরনো আর উঠতি ফুটবলার। এবারই প্রথম অভিনব পদ্ধতিতে দুই ভাগে করা হচ্ছে ক্যাম্প। একভাগে সিনিয়র এবং অন্যভাগে আছেন জুনিয়র ফুটবলাররা। সিনিয়র দলে আছেন অভিজ্ঞ ফুটবলাররা। তাদের ক্যাম্প শুরু হতে যাচ্ছে রবিবার থেকে। তবে তাদের চাপে রাখতে চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ খেলা ফকিরেরপুলের জালাল, চট্টগ্রাম মোহামেডানের অসাই মং, সাইফ স্পোর্টিংয়ের মতিন মিয়া এবং সাদ ও নিপুর মতো উদীয়মান ফুটবলারদেরও ডাকা হয়েছে ক্যাম্পে। অবশ্য এই তরুণদের ডাকার ভিন্ন উদ্দেশ্যও আছে। অনুর্ধ-২৩ দলও গড়া হবে ডাক পাওয়া এই ফুটবলারদের মধ্য থেকেই। কেননা মার্চেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। এই আসরে বাংলাদেশের দু’টি দল খেলার কথা রয়েছে (জাতীয় দল এবং অনুর্ধ-২৩ বা যুব দল)। অবশ্য তার আগেই ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট। যেখানে খেলবে দেশের তিন ক্লাব এবং বিদেশের পাঁচটি ক্লাব। স্বভাবিকভাবেই সেরা খেলোয়াড়দের নিয়েই এই আসরে খেলতে নামবে চট্টগ্রাম আবাহনী, লীগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী এবং মোহামেডান স্পোর্টিং। প্রতিটি ক্লাবই অন্য ক্লাব থেকে খেলোয়াড় নেবে। তাই সেখানে একরকম যাচাই-প্রস্তুতিই হয়ে যাবে দেশীয় ফুটবলারদের। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ দিয়েও পরীক্ষা হয়ে যাবে ফুটবলারদের। এসব কিছুই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দল গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০০৩ সালে সাফজয়ী বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন জর্জ কোটান। তিনি চলতি মৌসুসে ঢাকা আবাহনীকে লীগ ও ফেডারেশন কাপেও চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন (স্বাধীনতা কাপে করিয়েছেন রানার্সআপ)। সেই অস্ট্রিয়ান কোটানকেই জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্বে দেখা যাবার সম্ভাবনাই প্রবল। আর সেটা হলে তিনি বাংলাদেশে পা রাখবেন ফেব্রুয়ারিতে। তখন তিনি শেখ কামাল টুর্নামেন্টে স্থানীয় খেলোয়াড়দের পরখ করে নেয়ার সুযোগ পাবেন। অবশ্য ঢাকা আবাহনীর কোচ থাকার সুবাদে কোটান এমনিতেই আবাহনীসহ সব ক্লাবের দেশীয় ফুটবলারদেরই সম্পর্কে কমবেশি ওয়াকিবহাল। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু গোল্পকাপে বাংলাদেশ ২০১৫ আসরে মালয়েশিয়া যুব দলের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল। বাকি দুই আসরে (১৯৯৬ ও ১৯৯৯) ফাইনালে উঠতে পারেনি। ডিসেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। তার আগে দু’তিনটি আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচ। সবমিলিয়ে পুরো বছরজুড়ে সাফের প্রস্তুতিটাই সারবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। দিনকয়েক আগে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রাথমিক দল ঘোষণা করে বাফুফে। ৬২ ফুটবলারকে দুই ভাগে ভাগ করে করা হয়েছে ক্যাম্প। গ্রুপ ‘এ’র ৩৩ ফুটবলার দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপুর কাছে ফুটবলাররা রিপোর্টিং করবে আগামী ২২ জানুয়ারি। গ্রুপ ‘বি’তে আছে ২৯ ফুটবলার। তাদের রিপোর্টিংয়ের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় দলের পাশাপাশি এই ফিটনেস ক্যাম্পে অংশ নেবে অনুর্ধ-২৩ দলসহ সিনিয়র ও বয়সভিত্তিক টিমের সদস্যরাও। এতদিন জানা ছিল বাফুফে নতুন ক্যাম্পের জন্য ৫৫ ফুটবলারকে নির্বাচিত করবে। প্রাথমিক দলে সেখান থেকে ৪৮ ফুটবলারকে রাখা হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎই সভা করে ৬২ ফুটবলারের এই ফিটনেস ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নেয় টিম সিলেকশন কমিটি। সেই সঙ্গে ক্যাম্প শুরু হবার তারিখ দু’দিন পিছিয়ে ২২ জানুয়ারি করা হয়। মূলত বিকেএসপিতে আবাসন সমস্যার কারণেই বাধ্য হয়ে ক্যাম্প দু’দিন পেছানো হয়েছে। ২২ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি হবে প্রথম পর্বের ক্যাম্প। আর দ্বিতীয় পর্বের ক্যাম্প হবে ৩ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি। দুই ক্যাম্পেরই ভেন্যু সাভার বিকেএসপি। দুই গ্রুপের এই ৬২ ফুটবলারকে নিয়ে কাজ করার পর একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন বাফুফের কাছে পাঠাবে ফিটনেস প্রশিক্ষক গ্রুপ। তাদের মূল্যায়নের প্রেক্ষিতেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য পরবর্তীতে দল চূড়ান্ত করা হবে। ফিটনেস ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন বাফুফের ফিটনেস ট্রেনার জন হুইটেল, গোলরক্ষক কোচ রায়ান স্যান্ডফোর্ড ও সৈয়দ গোলাম জিলানী এবং টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি।
×