ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌম্যের বাজিমাত তবুও আক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

সৌম্যের বাজিমাত তবুও আক্ষেপ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথমবারের মতো টেস্টে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামলেন। তাতেই বাজিমাত করলেন সৌম্য সরকার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৪ বলে ১১ চারে ৮৬ রানের ইনিংস খেললেন। যা ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। এমন ইনিংস খেলার পরও সৌম্যের মধ্যে আক্ষেপ আছে। থাকবে। থাকাটাও স্বাভাবিক। এত সুন্দর একটা ইনিংস খেলার পরও যে ওপেনিংয়ে তার স্থান পাকা নয়। ইমরুল কায়েস ইনজুরিতে দলের বাইরে। সেই সুযোগে সৌম্য ওপেনিংয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যেটি সৌম্যের পছন্দের স্থান। কিন্তু ইমরুল যেই ফিরবেন, তখনই আবার স্থানটি ছেড়ে দিতে হবে। একাদশে থাকলেও হয়ত তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিংয়ে জুটি হয়ে নামতে পারবেন না। সেই স্থানটিতে যে ভালভাবেই স্থান করে রেখেছেন ইমরুল। আর তাইতো সৌম্যের কণ্ঠে আক্ষেপের সুরও শোনা গেছে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে প্রথমদিনেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২৮৯ রান করেছে। এরমধ্যে সৌম্যই করেছেন ৮৬ রান। ১৪ রানের জন্য শতক হাতছাড়া করেছেন। প্রথমদিন শেষে সৌম্য আক্ষেপ করেই জানিয়েছেন, ‘আসলে আমি ওপেন করতে চাই। কিন্তু জায়গা কোথায়? তামিম ভাই আর ইমরুল ভাই ওই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। দু’জনই দারুণ সফল। তাদের জায়গায় ঢোকা সম্ভব না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তারপরও আমি মনে মনে ওপেন করার কথা ভাবতাম। যেভাবেই আসুক অবশেষে একটা সুযোগ এসেছে। আমি চেষ্টা করেছি ইমরুল ভাইয়ের জায়গাটা পূরণ করার।’ সৌম্য অবশ্য এত বড় ইনিংস খেলতে পারতেন না। যদি একবার ‘নতুন জীবন’ না পেতেন। ৫৮ বলে ৫২ রানে ছিলেন সৌম্য। তখন দলের রান ১০৮। গ্র্যান্ডহোমের করা ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সিøপে ক্যাচ হওয়া থেকে বাঁচেন। গ্র্যান্ডহোমের করা বলটি সৌম্যের ব্যাটের ছোঁয়া লেগে প্রথম সিøপের দিকে যায়। একটু দ্বিতীয় সিøপেও বলটি হেলে পড়ে। প্রথম সিøপে থাকা রস টেইলর বলটি ক্যাচ নিতে চেষ্টা করেননি। তবে দ্বিতীয় সিøপে থাকা জিত র‌্যাভাল ক্যাচটি মুঠোবন্দী করতে চেষ্টা করেন। পারেননি। হাতের ছোঁয়া লাগে। কিন্তু বলটি বাউন্ডারি হয়ে যায়। ‘নতুন জীবন’ পেয়ে যেন সৌম্য আর পেছন ফিরে তাকাননি। এগিয়েই চলেন। কিন্তু শতক থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান। ট্রেন্ট বোল্টের বলে সৌম্যকে থামান গ্র্যান্ডহোমই। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতক আর হয়নি সৌম্যের। শর্ট কাভারে গ্র্যান্ডহোমের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। ৩৮ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সাকিবের সঙ্গে দুর্দান্ত একটি জুটি গড়েন এ ওপেনার। তৃতীয় উইকেটে ১২৭ রানের জুটি গড়েন। যা দলকে ১৬৫ রানে নিয়ে যায়। এমন সময় টেস্টে প্রথম অর্ধশতকসহ ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলে আউট হন সৌম্য। ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হয় সৌম্যের। এরপর ক্রাইস্টচার্চ টেস্টটির আগে তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। ভারতের বিপক্ষে ২০১৫ সালে প্রথম ইনিংসে যে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন, সেটিই শুক্রবারের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল। টেস্টে অভিষেকের পর খুব ভাল খেলতে পারেননি। তাই গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পাননি। এবারও টেস্ট একাদশে সৌম্য থাকবেন, এমনটি ভাবা হয়নি। তার যে টেস্টে স্থানই নেই। ইমরুল ইনজুরিতে পড়ায় সুযোগটি ধরা দিল। তাতে নিজেকে মেলেও ধরলেন। অবশ্য এমন পারফর্মেন্সের পরও সৌম্য পুরোপুরি সুখী হতে পারছেন না। কেন? শুনুন সৌম্যের কণ্ঠেই, ‘ওয়ানডে, টি২০ বা টেস্ট যে সংস্করণেই হোক, রান দরকার ছিল আমার। চেয়েছিলাম যেখানেই খেলি রান করব। কিন্তু আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ইনিংসটা বড় করতে পারলে আমার জন্য ভাল হত। এরচেয়ে বড় হলো, দলেরও অনেক উপকার হতো। আমি আউট হওয়ার পর সাব্বির আর সাকিব ভাই আউট হয়ে গেছে। আমি আউট না হলে হয়তো তারাও আউট হত না। আর তাহলে স্কোর বোর্ডে দলের রানটাও ভাল থাকত।’ তবে নিজেকে প্রমাণ করার কথা উচ্চকণ্ঠেই জানান দিয়েছেন প্রথমবার টেস্টে ওপেন করতে নেমেই বাজিমাত করা এ ব্যাটসম্যান, ‘আমি পারি। আমার টেস্টে ওপেন করার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে।’
×